সুন্দরবনে পানীয় জলের সংকট দেখা দিচ্ছে কেন? এখানে কি সুনামি দেখা দিতে পারে? তার জেরে কি কলকাতায় বড় প্রভাব পড়তে পারে? সম্প্রতি এই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ একাধিক আন্তর্জাতিক রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যেহেতু সুন্দরবনে লবণাক্ত জলের প্রভাব বেশি তাই পানীয় জলের সংকট দেখা দিচ্ছে। এখানের বেশিরভাগ এলাকায় নলকূপ থেকে লবণাক্ত জল বেরিয়ে আসে। যা জল পান করা বা রান্নার কাজের জন্য ব্যবহার করা যায় না। এই লবণাক্ত জলের বাড়বাড়ন্তে বিপদ বাড়ছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের। আর ম্যানগ্রোভের ক্ষতি হলে কলকাতার ভবিষ্যৎ বেশ চাপের। সমুদ্রের জল বাড়ার জেরে যদি কখনও সুনামি হয় তাহলে কলকাতা ডুবে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা একাধিক আন্তর্জাতিক রিপোর্টে আছে।
এই নানা আন্তর্জাতিক রিপোর্ট নবান্নের কাছে এসেছে। আর তারপরই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ক্ষতি ঠেকাতে দু’টি বড় প্রকল্প হাতে নিতে চলেছে নবান্ন। এক, বিশ্বব্যাঙ্কের সহযোগিতায় ৪১০০ কোটি টাকা খরচে ‘সাসটেইনেবল হার্নেসিং ওশান রিসোর্স অ্যান্ড ইকোনমি’। দুই, নিম্ন বদ্বীপ অঞ্চলে বাঁধ নিয়ে পরিকাঠামো এবং মাটিতে জমা হওয়া নুনের মাত্রা কমানোর জন্য প্রকল্প। এক্ষেত্রে ১২৩০ কোটি টাকা খরচ করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এমন খবর নবান্ন সূত্রেই মিলেছে। তাই এই দুই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করতেই আজ, বুধবার বাংলায় আসছে বিশ্বব্যাঙ্কের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল।
আরও পড়ুন: ‘কংগ্রেসের ব্যর্থতার জন্যই বিজেপি পুনরায় কেন্দ্রে’, নয়া বইতে চরম আক্রমণ মমতার
এই দুটি প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদল বৈঠক করবেন। খতিয়ে দেখবেন গোটা প্রকল্পের বিষয়টি। সরেজমিনে রিপোর্ট নেবেন তাঁরা। আর সব চূড়ান্ত হয়ে গেলে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ১১টি ব্লকে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ৩৯টি দ্বীপকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে। কারণ সেখানে জনবসতি রয়েছে। এই প্রকল্প যেখানে হবে সেই এলাকা ঘুরে দেখবেন বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। তারপর গোসাবায় এই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বৈঠক করবেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার এবং রাজ্যের অফিসারদের সঙ্গে। এখানে আরও একটি বিষয় আছে। সেটি হল—উচ্চ বদ্বীপ অঞ্চলের জন্য ১,৩৫৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পটি হবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সহায়তায়। তাতে ৪০৫ কোটি টাকা খরচ করবে রাজ্য সরকার।
সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখা এবং এখানের আরও উন্নয়ন ঘটাতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য, জীবজগৎ এবং জনবসতি যাতে ঠিক থাকে তার জন্যই নানা পরিকল্পনা এবং প্রকল্প গড়ে তুলতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি ‘গঙ্গাসাগর সেতু’ গড়ে তোলার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। সুন্দরবন কলকাতার খুব কাছে হওয়ার জেরে এখানের প্রভাব শহরে পড়ে। একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সে নমুনা মিলেছে। আর তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে এই কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান মানস ভুঁইয়া। এই প্রকল্প গড়ে তুলে মিষ্টি জলের প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। বিশ্বব্যাঙ্কের সহযোগিতায় প্রকল্প করতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্র লাগে। তাই প্রয়োজনীয় নথি পাঠানো হয়েছে নয়াদিল্লিতে।