আরজি কর কাণ্ড নিয়ে উত্তাল রাজ্য। দেশ। আঁচ পড়েছে বিদেশেও। পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ। দ্রুত বিচারের দাবি উঠছে সমাজের সর্বস্তর থেকে। কিন্তু বারংবার এভাবে কর্মক্ষেত্রে, পথে নারী নিগ্রহ, অত্যাচার এগুলো মানুষের মনে ঠিক কী প্রভাব ফেলছে? কেনই বা অপরাধীদের এত আড়াল করার চেষ্টা? সবটা নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে কী জানালেন মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ?
আরজি কর কাণ্ড নিয়ে মোহিত রণদীপের মত
এটা ঠিক যে এমন ঘটনা নতুন সেটা নয়। বহুযুগ ধরেই এমনটা ঘটে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে এই ধরনের যে কটা ঘটনা ঘটেছে প্রত্যেকটাতেই রাজ্য অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। সে পার্ক স্ট্রিট বলুন, মধ্যগ্রাম বলুন, কামদুনি বলুন বা আজকের আরজি কর। এবং শোনা যাচ্ছে আরজি করের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও অনেক কিছুই। নেক্সাস চলতো বলেই জানা যাচ্ছে, যার সঙ্গে দুর্নীতি জড়িয়ে আছে। ভয়ানক কর্মকাণ্ড চলে সেখানে। এমনকি যে সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরা সেদিন ওখানে গিয়েছিলেন, উপস্থিত ছিলেন তাঁদের চোখেও কি কিছুই ধরা পড়েনি? তাঁরা কি কিছুই জানতেন না? এটা আমার একটু আশ্চর্য লেগেছে। আমার কাছে এটা প্রশ্ন বলতে পারেন, তাঁদেরও কি তবে চুপ করিয়ে রাখা হচ্ছে?
আজকে আমাদের এটা ভাববার বিষয় যে ধরুন এই ঘটনার যদি সত্যিই সুবিচার না হয়, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে যদি ধরা না হয় এবং তাঁদের আইন অনুযায়ী শাস্তি না হয় তাহলে এই ধরনের অপরাধীরা এক ধরনের ছাড়পত্র পেয়ে যাবে যে আমরা যা খুশি করতে পারি, আর কিছু হবে না। এই তো, ১৪ তারিখ রাতেই আরজি করে যেটা ঘটল তাতেই যে ডেসপারেশন ধরা পড়েছে তাতেই বোঝা গিয়েছে যে অপরাধীরা জানেন যে তাঁরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন, কারণ তাঁদের বরাভয় দেওয়ার কেউ আছেন। এটা কিন্তু স্পষ্ট ছিল। তাঁরা কতটা প্রমাণ লোপাট করতে গেছিল বা পেরেছিল জানি না, কিন্তু এটা বোঝা গেছে যে সেমিনার হল তাঁদের লক্ষ্য ছিল। ভুল বোঝাবুঝির কারণে পৌঁছতে পারেননি। পুলিশের ভূমিকা এক্ষেত্রে বড়ই সন্দেহজনক। পুলিশ কিন্তু জায়গা দিয়েছে ওঁদের ঢোকার। এদিকে শ্যামবাজার থেকে যখন একের পর এক মিছিল আরজি করের দিকে এগোচ্ছিল তখন পুলিশ তাঁদের উদ্দেশ্য করে লাঠি চালালো, টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে। এবং সবটা অতি যত্ন নিয়ে করেছে।
এই ঘটনায় একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে হতাশা লাগছে। সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাজনক। সন্দীপ ঘোষ পদত্যাগ করতেই তাঁকে অন্য জায়গায় বহাল করা হল। মুখ্যমন্ত্রীর কী এমন বাধ্যবাধকতা ছিল যে তাঁকে অন্য জায়গায় তৎক্ষণাৎ বহাল করতে হল?
রাত দখল নিয়ে কী মত মোহিত রণদীপের?
আমি নিজেই ওই দিন গিয়েছিলাম। এই ডাক মেয়েদের ছিল। আমরা তাঁদের পাশে ছিলাম। অনেক পুরুষ এদিন এসেছিলেন, কেউ তাঁর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। আবার তেমন কিছু সুযোগ সন্ধানী পুরুষও ছিলেন, যাঁরা অসভ্যতা করেছেন ওই ভিড়ের মধ্যে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। তবে এটা পরিকল্পনা করে ঘটানো হয়েছে কিনা জানি না। হলেও আশ্চর্য হবো না।
হুগলি কমিশনারেটের একজন কর্তা একটি নামি পত্রিকায় প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের না জানিয়ে সেখানে মিছিল হচ্ছে, তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন এমন জমায়েত হলে। ফলে এটা হুমকি ছাড়া আর কী? কিন্তু এই হুমকি যিনি দিয়েছিলেন তিনি তাঁর নাম জানানোর সাহস পর্যন্ত দেখাননি, কিন্তু দেখানোর কথা ছিল। তাই পুলিশের এই আচরণ কিন্তু প্রশ্রয় দিয়েছে এই ধরনের দুষ্কৃতীদের। রাজনৈতিক ভাবে দুষ্কৃতীদের পাঠানো হয়েছে কিনা জানি না। তবে এটা বলতে পারি যে একটা প্রক্রিয়া চলছে এই স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগকে বদনাম করার। এঁদের ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সকলে নিজে থেকে এতে যোগ দিয়েছেন। এগিয়ে এসেছেন।
আরও পড়ুন: রূপান্তরকামী নারীর 'বুক টিপে' RPF-এর প্রশ্ন 'এটা আসল? ওজন কত?',পুলিশের দ্বারস্থ ২ নির্যাতিতা
প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে কী মত?
প্রশাসন যদি প্রশ্রয়দাতা হয়, মদত দেয় তাহলে এমন ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে। পার্ক স্ট্রিট ঘটনার যিনি দায়িত্বে ছিলেন সেই দময়ন্তী সেনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মনে থাকবে নিশ্চয়? এবং পরবর্তীতে দেখা যায় যিনি সেই ঘটনায় অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হন তাঁর সঙ্গী পরবর্তীতে এমপি হয়েছিলেন। এটাই যদি শাসকের আচরণ হয়, অপরাধীকে আশ্রয় দেয় বারবার তাহলে এটা হবেই।
রাজ্যে বারংবার এমন ঘটনা ঘটে চলেছে, সেটার প্রভাব কতটা পড়ছে সমাজের উপর? মূলত কন্যা সন্তানদের বাবা মায়েদের উপর?
ভীষণ প্রভাব পড়ছে। গতকাল নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ে এক উচ্চপদস্থ মহিলা অফিসার আমায় জানান 'দাদা, করোনার সময় রাত আটটা, সাড়ে আটটা পর্যন্ত কাজ করেছি। লোকজন থাকত না। গুটিকয় পুলিশ থাকত খালি। আর আমার ড্রাইভার থাকত নিচে। আমি তখন নির্ভয়ে কাজ করেছি। কিন্তু আজ সন্ধ্যা সাতটার পর কাজ করতে ভয় পাব।' কোথায় বসে উনি এটা বলছেন? নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ে। কে বলছেন একজন অফিসার। তাঁর নাম বলছি না, কিন্তু এটাই হল বাস্তব। একজন WBCS অফিসার যদি এমন বলেন তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন?