শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী মহম্মদ ইউনুস সরকার আসতেই একাধিক পদক্ষেপ নেয় ঢাকা। তৈরি হয় গুম কমিশন। সদ্য, গুম কমিশন তার অন্তর্বর্তী রিপোর্ট তুলে দিয়েছে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের হাতে। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শীর্ষক এই রিপোর্টে গুমের শিকার ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, কর্মকর্তাদের নানা বক্তব্য ও হত্যার বর্ণনা উঠে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
যে সব ঘটনা এই গুম কমিশন জানতে পেরেছে, তা রিপোর্টে তুলে ধরেছে। সেখানে কী পদ্ধতিতে নির্যাতন চালানো হত, আর মৃতদেহ কোথায় ফেলা হত, তার তথ্য উঠে এসেছে। ‘প্রথম আলো’র রিপোর্টে এই কমিশনের প্রতিবেদন থেকে উঠে আসা বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কী কী উঠে এসেছে দেখা যাক।
অ্যানাসথেশিয়া না দিয়েই বন্দির ঠোঁট সেলাই!
‘প্রথম আলো’র রিপোর্ট বলছে, বেসামরিক বাহিনীর বন্দিশালায় নিয়মিত ভিত্তিতে চলত অত্যাচার। শুধু নির্যাতন চালানোর জন্যই সেখানে বেশ কিছু সরঞ্জাম রাখা থাকত। বন্দিশালার কাছাকাছি বসে অফিস করতেন কর্মকর্তারা। বলা হচ্ছে, ওই গোপন বন্দিশালায় যখন চরম নারকীয় অত্যাচার চলছে, তখনও নির্লিপ্তভাবে কর্মকর্তাদের কাজ করতে দেখা গিয়েছে বন্দিশালার কাছে বসে। নির্যাতনের মাত্রা কেমন ছিল, তার কিছু উদাহরণ রিপোর্টে রয়েছে বলে খবর। সেখানে বলা হচ্ছে, ২০১০ সালেক এক ঘটনার কথা। সেবার ঢাকার ধানমন্ডি থেকে এক তরুণকে তোলা হয়েছিল। তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে একটি ঘরে রাখা হয়েছিল, যেখানে তাঁকে অচৈতন্য না করেই, অর্থাৎ অ্যানাসথেশিয়া না দিয়েই ঠোঁট সেলাই করে দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ঘটনায় বলা হচ্ছে ২০১৮ সালের কথা। সেই বছর এক মাঝ বয়সী ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁর যৌনাঙ্গ ও কানে পর পর ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। দাবি করা হয়েছে, এটি ব়্যাবের বন্দিশালায় হয়েছে।
চলত গুলি, দেহ ফেলা হত কোন কোন নদীতে?
রিপোর্ট বলছেস খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিকেই কোনও মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হত। নয়তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হত্যা নয়তো ফৌজদারি অপরাধের মামলা জুটত বন্দিদের কপালে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে কাউকে কাউকে। ব়্যাবে কর্মরত ছিলেন, এমন সামরিক বাহিনীর অনেকে জানিয়েছেন, সিমেন্টের বস্তায় বেঁধে মৃতদেহ ফেলাহত নদীতে। ঢাকার কাছেই শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে দেহ ডুবিয়ে দেওয়া হত বলেও রিপোর্ট দাবি করছে। নদীতে লাশ ফেলতে, পোস্তা গোলা ও কাঞ্চন ব্রিজ ব্যবহার করা হত, পস্তাগোলাব্রিজের কাছে থাকা নৌকাও মৃতদেহ ডোবাতে সাহায্য করেছে।
কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বেশ কিছু জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলি পরিদর্শন করেছেন কমিশনের সদস্যরা। যার মধ্যে ডিবি দফতর, ব়্যাব ইউনিটের অফিসও রয়েছে। এমন ৮ কেন্দ্রের মধ্যে কাঠামোগত মিল রয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এই নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি, বলে খবর।