সেলেব দুনিয়ার বহু সম্পর্কই এখন ভাঙনের মুখে। তার মধ্যেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার নজির গড়ে চলেছেন মধুবনী ও রাজা গোস্বামী। সোশাল মিডিয়ার ডেইলি ভ্লগে প্রায়ই ধরা পড়ে তাঁদের মধুর সমীকরণ। ভঙ্গুরতা স্পর্শ করতে পারেনি মধুবনী-রাজাকে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে রাজা বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আসি, তখন ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করা শুরু করি। কারণ জানতাম পরবর্তীকালে বাবা-মা হব। সন্তান দেখবে বাবা-মা তুইতোকারি করছে, সেটা আমাদের ঠিক ভালো লাগবে না।’ ‘তুই’ ডাকে যে ভালোবাসা আছে, সে কথা রাজা অস্বীকার করতে ভোলেননি। কিন্তু তুই না তুমি, সম্পর্কের শ্রদ্ধা ধরে রাখতে হলে কোনটা বেশি ভালো? নাকি এসব আদতে কোনও ব্যাপারই নয়? এই নিয়েই HT বাংলা শুনল বর্তমান প্রজন্মের মতামত। মনের উপর এই বিষয়টি কতটা প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে মতামত জানালেন মনোবিদ উষসী বন্দ্যোপাধ্যায় ও মনোবিদ সৃষ্টি সাহা।
‘পারস্পরিক শ্রদ্ধার একটা প্রতীক’
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী অরিন্দম মণ্ডল। কর্মসূত্রে কলকাতার বাইরের বাসিন্দা হলেও কলকাতায় বড় হয়ে ওঠা, কলকাতাতেই একেবারে বাঙালি কায়দায় প্রেম। ২৭ বছরের যুবকের কথায়, ‘কিছু কিছু সম্পর্কের একটা আলাদা মর্যাদা থাকে। অন্যান্য সম্পর্কের সঙ্গে সেগুলি গুলিয়ে ফেলা যায় না। স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা সম্পর্ক অনেকটা তেমন। বন্ধু তো 𝓰বটেই, কিন্তু বিশেষ বন্ধু। আমরা কাউকে সম্মান জানাতে হলে প্রথমেই তুই করে কথা বলি না। কিছু বিশেষ সম্পর্ক যত গড়ায়, তত ‘তুমি’টা সম্মান ও শ্রদ্ধার প্রতীক হয়ে ওঠে। তাই আমার মনে হয় তুমꦏি ডাকটাই শ্রেয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধার একটা প্রতীক হিসেবে এই ডাকটাই থাকা ভালো।’
‘তুমি বলেও যদি দিনের পর দিন অপমান…’
কথা হচ্ছিল পিএইচডি গবেষক আদৃতা বিশ্বাসের সঙ্গে। বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কলেজ বয়স থেকেই চুটিয়ে প্রেম। এই ব্যাপারে তাঁর🔯 মতামত অবশ্য কিছুটা আলাদা। আদৃতা বললেন, ‘তুই বা তুমি ডাক ততটা ম্যাটার করে না একটা সম্পর্কে। দীর্ঘ দিন ধরে একসঙ্গে থাকতে থাকতে তুইটা নর্মাল হয়ে যায়। আসলে শ্রদ্ধা বা সম্মান দেখাতে হলে তা কাজে ও ব্যবহারে দেখানো দরকার। তুমি বলে ডেকে কেউ যদি দিনের পর দিন স্বামী বা স্ত্রীকে অপমান করে যায়, সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে যথার্থ মর্যাদা না দেয়, তাহলে কিন্তু সেই সম্পর্কের মূল্য থাকে না, ডাকের মূল্য তো থাকেই না!’
‘ডাক ঠিক করে দেয় বন্ধুত্বের গভীরতা’
প্রবীণ মনোবিদ উষসী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (সিনিয়র ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট, মণিপাল হাসপাতাল ব্রডওয়ে) কথায়, ‘আমার মনে হয় না এই বিষয়গুলো ততটা গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ পর্যন্ত দুজনের দুজনের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং পার♏স্পরিক শ্রদ্ধা থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি/তুই বলে সম্বোধন করা খুব একটা 𓆉গুরুত্বপূর্ণ নয়। এক প্রজন্ম আগেও দুটো আলাদা লিঙ্গের বন্ধুত্ব বিরল ছিল। তাই একে অপরকে ‘তুই’ সম্বোধন করার ধারণা ছিল না।’
‘গুরুত্বপূর্ণ হল…’
ডাকের থেকেও যে ব্যবহার বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে কথা উঠে এল উষশীর কথায়। মনোবিদ জানালেন, ‘বয়সে বড়় হলে অনেকে তুমি বলে ডাকেন। কিন্তু আজকাল প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বয়স ফ্যাক্টর নয়। প্রায়ই দেখা যায়, সবসময় পুরুষই বয়স্ক হন না, অনেক ক্ষেত্রে মহিলাও বয়স্ক হতে পারেন। সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে মৌলিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করা উচিত নয়। এটি বেশি গ🗹ুরুত্বপূর্ণ।’
‘আমাদের সংস্কৃতিতে…’
অন্যদিকে মনোবিদ সৃষ্টি সাহার (ফর্টিস হাসপাতাল আনন্দপুর) কথায়, ‘ডাক মূলত ব্যক্তিভেদে পাল্টে যায়। সম্পর্ক উন্নত করার জন্য সঙ্গীকে কী বলা উচিত তা ঠি💯ক করে দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনও মনস্তাত্ত্বিক নিয়ম নেই। আমাদের সংস্কৃতিতে, সম্পর্কের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সম্বোধন করার জন্য বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন, ‘তুই’ সাধারণত একই বয়সের মানুষদের জন্য ব্যবহৃত হয় - বন্ধু বা সমবয়সী - যাদের সঙ্গে আমরা বেশ ঘনিষ্ঠ। ‘তুমি’ প্রায়শই একটু বড়দের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে সম্পর্ক ততটা ঘনিষ্ঠ নয়।’
‘বড় হয়ে ওঠার উপর নির্ভর করে’
সৃষ্টির মতে, একজনের পারিবারিক ও পারিপ✱ার্শ্বিক ধ্যানধারণার উপরেও নির্ভর করে এই ডাকের সমীকরণ। তাঁর কথায়, ‘তুমি বা তুই ডাকটার চয়েস একজনের বড় হয়ে ওঠা, চারপাশের পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে। যেমন, ইংরেজিতে 'ইউ' সাধারণত সকলের জন💯্য ব্যবহৃত হয় ঘনিষ্ঠতা নির্বিশেষে। আমাদের এখানে কিন্তু সেই সংস্কৃতি কোনওকালেই ছিল না।’
‘যুগ পাল্টেছে, তাই…’
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ডাক পাল্টে যাওয়ার দিকটিও তুলে ধরলেন সৃষ্টি। তাঁর কথায়, ‘মানুষের মতামত ভিন্ন। অতীতে নারীরা তাদের স্বামীদের ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। কিন্তু এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুগ পাল্টেছে। স্বামীদের উদ্দেশ্য করে আপনি ডাকটা আমাদের আগের প্রজন্মেই তুমি হয়ে হিয়েছে। এখন ছেলে-মেয়েদের সহজ বন্ধুত্বের যুগে তুই ডাকটাও তাই অস🦩্বাভাবিক নয়।’