বয়স মাত্র চার মাস। এর মধ্যেই শরীরে বাসা বেঁধেছে দুরারোগ্য ব্যাধি। আর এই রোগের হাত থেকে তাকে বাঁচেতে লেগে পড়েছে গোটা দেশ! তা হবে নাই বা কেন, একরত্তি এই শিশুর চিকিৎসা খাতে ব্যবহৃত একটি ইঞ্জেকশনের দামই যে ১৬ কোটি টাকা! এবার ওই বিপুল পরিমাণে অর্থ জুগিয়ে শিশুটিকে বাঁচালেন নেটিজেনরা।
বিরল রোগে আক্রান্ত ওই শিশুটির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গুজরাতের বাসিন্দা ওই শিশুটির নাম ধৈর্য়্যরাজসিংহ রাঠোর। আজই তাঁকে ওই ইনঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। ওই শিশুর চিকিৎসায় কেন এত খরচ, এমন কিইবা হয়েছে তাঁর। কোথা থেকেই বা এত অর্থের জোগান হবে। তা ভেবেই কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না তার বাবা রাজদীপসিংহ রাঠোড ও মা জিনল রাঠোড।
রাঠোড দম্পতির নাগরিকদের কাছে সাহায্যের জন্য যাওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোনও উপায়ই রইল না যখন ওই দম্পতি জানতে পারলেন যে তাঁদের সন্তান পেশীতে বিরল রোগ বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম ‘স্পিনা মাসকিউলার অ্যাট্রপি টাইপ ১’(এসএমএটি ১)।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই রোগ মূলত শিশুদের পেশীতে হয়। একবার এই রোগ ধরে নিলে ধীরে ধীরে শিশুদের পেশী দুর্বল হতে থাকে। চলাফেরার ক্ষমতা লোপ পায়। তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। শিশুর স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে একে একে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অকেজো করে দেয়। একসময় এমন আসে যখন মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কারণ, ব্রেনের কোনও তরঙ্গ বুঝতে পারেনা শরীর। সঠিক সময় চিকিৎসা না হলে, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা।
ধৈর্য়্যকে বাঁচানোর জন্য রাঠোড দম্পতি সবার কাছে অর্থের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোথা থেকেও এত বিপুল পরিমাণে অর্থ যোগাড় করা তাঁদের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
কারণ, গুজরাতের গোধরার একটি বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত রয়েছেন রাজদীপ। সামান্য বেতনের অর্থে এই চিকিৎসা করা সম্ভব ছিল না। পরে ধৈর্য়্যের এই রোগের ব্যাপার কোনও ভাবে সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আর তার পরই এগিয়ে আসেন বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থা ছাড়াও অগুন্তি নেটিজেনরা। তৈরি হয় গণ তহবিল। অসংখ্য মানুষ সেখানে অর্থ দান করেন। অনলাইনে ক্রাউডের মাধ্যমেও ধৈর্য়্যের জন্যে টাকা সংগ্রহ করা হয়।
রাজদীপসিংহ জানান, তাঁর ওই মহার্ঘ ইঞ্জেকশনের নাম ‘জোলগেনসমা’ যা ‘স্পিনা মাসকিউলার অ্যাট্রপি টাইপ ১’ রোগের জন্য প্রয়োজন হয়। এর একটি ডোজের দাম ১৬ কোটি টাকা। তার উপরে বিদেশ থেকে আনাতে তার শুল্ক খরচই ৫—৬ কোটি টাকা। যদিও এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন মহলে অনুরোধের পরেই ইঞ্জেকশনের জন্য শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়।
ধৈর্য্যের জন্য ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তার হাসপাতালে ভরতি, ফলো আপ চিকিৎসা ছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা খাতেও ব্যায় হবে।
মঙ্গলবার তাকে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। আজ ওষুধটি দেওয়া হয়। একদিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরে তাকে ছাড় দেওয়া হবে।
রাজদীপ বলেন, ‘ আমরা ৪২ দিনের মধ্যে অর্থ সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম। এমনকী, আমরাও আশা করিনি যে এত দ্রুত টাকা যোগাড় করা সম্ভব হবে। ধৈর্য়্যকে এক বছর বয়সের আগে এই ইঞ্জেকশনটি দিতে হল। তা না হলে সে পরে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে পারে।’
পরবর্তী খবর