শীতকালে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় সাধারণত সর্দি-কাশি তো হয়ই, আবার কারও কারও শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার সমস্যাও দেখা দিয়ে থাকে। এমনকী ভাইরাল জ্বরের চোখরাঙানিও এ সময় উপেক্ষা করা যায় না। আবার পুরনো আঘাত বা ব্যথাও শীতকালে বেড়ে যায়। এখানে জানুন ঘরোয়া উপায় কীভাবে শীতের শারীরিক সমস্যাকে দূরে রাখতে পারেন।১. সর্দি ও কাশি- শীতকালে এটি সাধারণ একটি সমস্যা ও সংক্রামকও বটে। সর্দি, কাশি, চোখ ও নাক দিয়ে জল পড়া, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, ইত্যাদি দেখা দেয়। ঘরোয়া উপায়:যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ও বার বার সর্দি-কাশি থাকে, তাঁরা আমলকির মোরব্বা খেতে পারেন।আবার আধ চা চামচ মধুতে কয়েক ফোটা লেবুর রস ও এক চিমটে দারচিনি পাউডার মিশিয়ে দিনে দুবার খান।সামান্য উষ্ণ জলে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করলে সর্দি, কাশি থেকে স্বস্তি পেতে পারেন।এক কাপ জলে সামান্য তিসি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে তা ছেঁকে নিন। এবার এতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করুন।ঘিয়ে ভাজা গরম গরম গোটা রসুন খেলে কাশি কমে।রাতে ঘুমানোর সময় কাশি বেড়ে যায়। কারণ এ সময় নাকে জমে থাকা কফ গলায় যেতে শুরু করে। এমন হলে মাথা উঁচু করে ঘুমানো উচিত। এর ফলে কাশি কম হয়।২. গলায় ইনফেকশন- শুকনো ও খসখসে গলা ইনফেকশনের দিকেই ইঙ্গিত দেয়। এ সময় গলায় ব্যথাও শুরু হয়। আবহাওয়া পরিবর্তন ও ঠান্ডার কারণে এমন হয়।ঘরোয়া উপায়:এর জন্য বহুল প্রচলিত উপায় গার্গল করা। সামান্য উষ্ণ জলে নুন দিয়ে গার্গল করলে ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়। দিনে দু'তিন বার এমন করলে গলা ব্যথা ও খসখস করা কমে যায়।হলুদ দুধও এমনই একটি কার্যকরী উপায়। এটি পান করলে গলা ফোলা ও ব্যথা থেকে স্বস্তি পাওয়া যায়। লাগাতার কাশি হলে হলুদগুঁড়ো দেওয়া দুধ পান করলে আরাম পেতে পারেন।হার্বাল চা বা গার্গলের জলে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ব্যবহার করতে পারেন।রসুনের কোয়া মুখে রাখলেও ইনফেকশন ও ব্যথা থেকে স্বস্তি পেতে পারেন।৩. অ্যাজমা- ফুসফুসের রোগ এটি। শ্বাসনলিতে জ্বালা, ব্যথা হওয়া, বুকের জমাট ভাব, কাশি, শ্বাসকষ্ট এর লক্ষণ। অ্যাস্থমা দু'ধরনের হয়-- অ্যালার্জিক ও নন-অ্যালার্জিক। ধুলো, ধোঁয়া ইত্যাদির কারণে অ্যালার্জিক অ্যাজমা হয়। আবার ঠান্ডা, ফ্লু, স্ট্রেস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে নন-অ্যালার্জিক অ্যাজমা হয়ে থাকে। ঘরোয়া উপায়:এক কাপ জলে আধ চা চামচ মুলেঠি পাওডার ও আধ চা চামচ আদা মিশিয়ে চা বানিয়ে পান করুন।এক গ্লাস দুধে আধ চা-চামচ কুচনো আদা ও আধ চা-চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে দিনে দু'বার পান করলে স্বস্তি পেতে পারেন।এক কাপ ফুটন্ত জলে এক চা-চামচ দারচিনি পাওডার ও ১/৪ চা-চামচ গোলমরিচ, সমপরিমাণে পিপলি ও সৌঁঠ মিশিয়ে ১০ মিনিট পর্যন্ত ফুটতে দিন। পান করার আগে এক চা-চামচ মধু মেশান। এটি অ্যাজমা অ্যাটাকের সম্ভাবনা কম করে।গরম জলে ৫-৬ ফোটা ল্যাভেন্ডার তেল মিশিয়ে স্টিম নিন।৪. ইনফ্লুয়েঞ্জা- শীতকালে নাক দিয়ে জল পড়া, গা ও মাথা ব্যথা, জ্বর ও ক্লান্তি এর সাধারণ লক্ষণ।ঘরোয়া উপায়:আধ চা-চামচ গিলোয় বেটে এক কাপ জলে ফুটিয়ে পান করুন।সমপরিমাণে মধু ও পেঁয়াজের রস মিশিয়ে দিনে তিনবার পান করুন। ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার হাত থেকে যতদিন মুক্তি পাচ্ছেন না, ততদিন এই উপায় করুন।এক চা চামচ মধুতে ১০-১২টি তুলসি পাতার রস মিশিয়ে দিনে একবার পান করলেও স্বস্তি পাওয়া যায়।গরম জলে কয়েক ফোটা নীলগিরি তেল মিশিয়ে ভাপ নিলে সুফল পেতে পারেন।এক কাপ জলে গোলমরিচ গুঁড়ো, জিরে ও গুড় দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ফ্লুয়ের লক্ষণ দেখা দিলে এই চা পান করতে পারেন।তিল ও গুড়ের লাড্ডু খেতে পারেন।৫. গাঁটে ব্যথা- ঠান্ডার কারণে মাংসপেশী ও হাড়ে ব্যথা শুরু হয়। এর জন্য ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করা উচিত। ঘরোয়া উপায়:আধ বালতি গরম জলে দু কাপ সন্ধৈব লবন মিশিয়ে তাতে তোয়ালে ডুবিয়ে নিন। এবার জল নিংড়ে নিয়ে, তা দিয়ে প্রভাবিত স্থানের সেঁক করুন।রোজ সকালে মেথি পাউডার খেয়ে এক গ্লাস সামান্য উষ্ণ জল পান করুন।নীলগিরির তেল দিয়ে মালিশ করুন। এর ফলে ব্যথা ও জ্বালা ভাব, দুই-ই কম হয়।রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরম তেলের মালিশ করুন। এর ফলে ব্যথা জর্জরিত এলাকায় রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। এর ফলে ব্যথা থেকে স্বস্তি পেতে পারেন।এক কাপ সামান্য উষ্ণ জলে এক চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ও সামান্য মধু মিশিয়ে দিনে দুবার খাবার আগে খান।৬. হৃদরোগের সমস্যা- শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেড়ে যায়। কারণ শীতের কারণে করোনারি আর্টারি সংকুচিত হয়। যার ফলে রক্তচাপ কমে যায়।ঘরোয়া উপায়:হৃদরোগ আক্রান্তদের শীতের সময় রোজ চার-পাঁচটি রসুনের কোয়া খাওয়া উচিত। এটি রক্ত পাতলা করে, যার ফলে সঠিক ভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।এক গ্লাস সামান্য উষ্ণ জলে আধ চা চামচ অর্জুন গাছের ছালের পাউডার ও মধু মিশিয়ে পান করুন।আদা, রসুনের রসে মধু বা গুড় মিশিয়ে খেলে হৃদয়ের নানান সমস্যা থেকে স্বস্তি পেতে পারেন।এছাড়াও খাওয়া-দাওয়ার যত্ন নিন। দুবার বেশি বেশি খাওয়ার পরিবর্তে চার-পাঁচ বার অল্প অল্প খান। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।