পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার পর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রেল স্টেশন ও লাইনে নাশকতার আশঙ্কা করছিল রেল। তাই নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে। সেই নির্দেশের পরেই যাত্রী এবং রেলের সুরক্ষায় জোরকদমে টহলদারি শুরু করে দিল আরপিএফ এবং জিআরপি। বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রতিটি ট্রেন এবং স্টেশনে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও বাহিনী। ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রেল স্টেশনগুলিতে তল্লাশি চালাচ্ছে আরপিএফ এবং জিআরপি। কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের। তাই বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তান আবার কোনও গোলমাল পাকাতে পারে। নাশকতা করতে পারে। আর তাই গত একসপ্তাহ ধরেই এই তল্লাশি চলছে। আরপিএফ সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে ইতিমধ্যেই বিশেষ নির্দেশ আসতেই তল্লাশি–টহল শুরু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে স্টেশনে নাশকতার আশঙ্কা, নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ রেলের
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে সূত্রে খবর, সংবেদনশীল এলাকায় যৌথ টহল দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি রেলপথে নজরদারি বৃদ্ধি এবং যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেলের নানা স্টেশন এবং ট্র্যাকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আরপিএফ এবং জিআরপির সঙ্গে এবার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফ’ও রেলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নজরদারি করবে বলে ঠিক হয়েছে। আর তার পর থেকেই কাজ শুরু হয়। উত্তর দিনাজপুর থেকে শুরু করে আলুয়াবাড়ি, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন, চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় থাকা তিস্তা সেতু, রেল ট্র্যাক–সহ ট্রেন ও অন্যান্য এলাকায় চলছে তল্লাশি–সহ নজরদারি।
রেল সূত্রের খবর, নিউ ময়নাগুড়ি স্টেশন থেকে আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের নিউ দোমোহনী স্টেশন পর্যন্ত বাহিনী, পুলিশ ও বিএসএফ যৌথভাবে পায়ে হেঁটে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। রেলপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অবৈধ পারাপার বন্ধ করা এবং যেকোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ শনাক্ত করার জন্য রেলপথ ধরে পায়ে হেঁটে টহল দেওয়া হয়। কাটিহার বিভাগে হলদিবাড়ি জিরো পয়েন্ট থেকে হলদিবাড়ি রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যৌথ পায়ে টহল দেওয়া হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে এই সব এলাকায় টহল দেওয়া হচ্ছে বলে রেল সূত্রের খবর। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন, ময়নাগুড়ি স্টেশন এবং নানা জায়গায় চলছে টহল। নামানো হয়েছে স্নিফার ডগ। বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। নাশকতা আটকাতেই এই টহলদারি। কিষানগঞ্জ আরপিএফের স্থানীয় পোস্টের ভারপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর হৃদেশ কুমার শর্মা জানান, রেল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের থেকে বিশেষ নির্দেশ এসেছে। তাই তৎপরতার সঙ্গে কাজ চলছে।
আরও পড়ুন: কেটে গিয়েছে ১২টি দিন, ফেরানো যায়নি পূর্ণমকে, এক পাক রেঞ্জারের গ্রেফতারে আশা স্ত্রীর
উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্তকারী রেলপথগুলি মূলত শিলিগুড়ি করিডোরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই এলাকা আবার ‘চিকেনস নেক’ নামেও পরিচিত। এর উত্তর ও দক্ষিণে নেপাল এবং বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি এবং বালুরঘাটের মতো রেলওয়ে স্টেশনগুলিও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় নিরাপত্তার প্রয়োজন।এছাড়াও, সীমান্তের কাছে অবস্থিত হলদিবাড়ি স্টেশনটি চিলাহাটির মাধ্যমে বাংলাদেশকে সংযুক্তকারী রেলপথের পাশে অবস্থিত। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের থেকে রিপোর্ট আসতেই এই নজরদারি বাড়াতে নির্দেশিকা এসেছে। বিএসএফ জিআরপি’র সঙ্গে আলোচনা করে আরপিএফকে নিয়ে সমন্বয় টিম তৈরি করা হয়েছে। বদরপুর স্টেশন, নিউ ময়নাগুড়ি থেকে নিউ দোমোহনি স্টেশন, হলদিবাড়ি স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
তবে গত বছরের অগস্টে বাংলাদেশে সরকার পতনের পরেই দুদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়। তারপর দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সীমান্তবর্তী রেল লাইনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আরপিএফ সূত্র জানা গিয়েছে, টহলদারি বাড়ানোর পাশাপাশি রেলস্টেশনগুলিতে নিরাপত্তা তল্লাশিও বাড়ানো হয়েছে। বালুরঘাটে আরপিএফ ট্রেন, যাত্রী এমনকী রেল কর্মীদেরও তল্লাশি করছে। এর আগে আরপিএফ এবং জিআরপি স্টেশনগুলিতে একটি সচেতনতা শিবির পরিচালনা করে। আরপিএফের এক আধিকারিক জানান, যাত্রী এবং রেলওয়ের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যৌথভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। ট্রেনের মাধ্যমে চোরাচালান রোধেও প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আর উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মার বক্তব্য, ‘যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং রেলের সম্পত্তি অক্ষত রাখতে ইন্দো–বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বিএসএফকেও নজরদারিতে যুক্ত করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরেও নিয়েছে।’