প্রথম স্বামী প্রয়াত। তারপর কেটে গিয়েছে কয়েকটি বছর। ইতিমধ্যেই আর এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রণয় হয়। তখনই দ্বিতীয় বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কিন্তু প্রথম স্বামী শিশু সন্তান যে তাঁর সঙ্গে রয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠতে পারে এই সন্তান। তাই পথের কাঁটা সরাতে মাঝরাতে শিশুকে ঘুম থেকে তুলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তারপর ওই শিশুর মৃত্যু নিশ্চিত করতে নতুন স্বামীর সঙ্গে মিলে ওই শিশুটির মা একটি ফাঁকা বাদাম চাষের মাঠের ঝোপে তাকে রাতের অন্ধকারে ফেলে আসেন। সংজ্ঞা হারিয়ে শিশুটি ঠাণ্ডার মধ্যে পড়েছিল মাঠে। যদিও জীবন কেঁড়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? নতুন করে সংসার পাততে অতীতকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল এই মা। কিন্তু প্রায় ৮ ঘন্টার পর সকালে জ্ঞান ফেরে শিশুটির। তখন কাছের একটি বাড়িতে কোনওরকমে হেঁটে শিশুটি নিজেই কাঁদতে কাঁদতে পৌঁছয়। যা দেখে শিউরে ওঠেন ওই বাড়ির লোকজন। একটু জল পান করতে চেয়েই আবার উঠোনে জ্ঞান হারায় ওই শিশু। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন, মাথা ফোলা, রক্তাক্ত ওই শিশুকে দেখে খবর দেওয়া হয় গ্রামবাসীদের। তখনই শিহরণ জাগানো নির্মম অমানবিক ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থানা এলাকার উত্তর হলদিয়া গ্রামের খয়রান্ডা এলাকায় পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে। বালিসাই বড়রাঙকুয়া হাসপাতালে ভর্তিও করে। ৬ বছরের শিশু একটু সুস্থ হতেই সবটা বলে দেয়। যা শুনে চোখে জল চলে আসে পুলিশ থেকে গ্রামবাসীদের।
আরও পড়ুন: ‘হাওড়া থেকে পালিয়ে আসতে চাই’, তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদের মন্তব্যে তুমুল বিতর্ক
তারপর ঠিক কী ঘটল? পুলিশ সূত্রে খবর, মা মামনি গিরি এবং সৎ বাবা সুকদেব মণ্ডল এই মারধরের সঙ্গে জড়িত। শিশুর হাত ভেঙেছে, পিঠে আঘাতের চিহ্ন, বিড়ির ছেঁকা দেওয়া হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। তাতেই শিশুটি জ্ঞান হারায়। তারপর শিশুটি মারা গিয়েছে ভেবে বাড়ি থেকে দু’কিমি দূরে মাঝরাতে স্বামী–স্ত্রী মিলে একটি বাদামের মাঠের ঝোপের আড়ালে ফেলে দিয়ে আসে শিশুকে। শীতের রাতে শিশুটির মাঠে পড়ে ছিল। কিন্তু ভাগ্যের জোরে শিশুটি সকালে রোদ উঠতেই জ্ঞান ফিরে আসে। পুলিশ শিশুর মা এবং সৎ বাবাকে গ্রেফতার করেছে। তার আগে নিজের শিশুকে মেরে ফেলার চেষ্টা করার অভিযোগে গ্রামবাসীরা ওই সৎ বাবা এবং মাকে ধরে গণধোলাই দেয়।
আর কী জানা যাচ্ছে? স্থানীয় সূত্রে খবর, শিশুর প্রকৃত বাবা তথা মামনির প্রথম স্বামী কার্তিক গিরি পাঁচ বছর আগে মারা যান। তখন উত্তর হলদিয়া গ্রামে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে থাকতেন মামনি। সম্প্রতি প্রেম শুরু হয় সুকদেব মণ্ডলের সঙ্গে। আর বিয়ে করে নেয় মামনিকে। অমানবিক অত্যাচার তারপর শুরু হয় শিশুটির উপর। ৬ বছরের শিশু সন্তানকে খুন করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় মামনি–সুকদেব। আজ, বুধবার পুলিশ হেফাজত চেয়ে মামনি–সুকদেবকে কাঁথি মহকুমা আদালতে তোলা হবে। মা হয়ে নিজের শিশুসন্তানকে খুন করার চেষ্টা দেখে গ্রামের প্রত্যেকে চাইছেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।