বসন্ত উৎসব মানেই শান্তিনিকেতন। আর শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথের প্রাণের নিকেতন। বোলপুরের এই আলোছায়াময় পরিবেশে আজ একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে আয়োজিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব। আর এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন কবিপুত্র। বস্তুত, কবিপুত্রের ভাবনা থেকেই জন্ম নিয়েছিল বসন্ত উৎসবের ধারণা।
১৯০৭ সালে প্রথম
কবির দ্বিতীয় পুত্রসন্তান শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অতি অল্প বয়সেই যিনি মারা যান কলেরা রোগে। তাঁর মৃত্যুর বছরেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম বসন্ত উৎসব। তবে নাম বসন্ত উৎসব ছিল না যদিও। ঋতু উৎসব ছিল তার নাম। ১৯০৭ সালে শান্তিনিকেতনে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ওই বছর শমীন্দ্রনাথকে মুঙ্গেরে পাঠিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথ। এক মাস পর খবর আসে শমী কলেরা আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে একজন ডাক্তার নিয়ে মুঙ্গের রওনা দিয়েছিলেন কবি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। সারা রাত যুদ্ধ চললেও বাঁচানো যায়নি কিশোর শমীকে। ১৯০৭ সালেরই শীতে তাঁকে পরপারে চলে যেতে হয়।
আরও পড়ুন - দোলের আগে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীতে বসন্ত উৎসব! ১১ ছবিতে ধরা পড়ল কিছু মুহূর্ত
দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফের
এর পর কেটে গিয়েছিল দীর্ঘ ১৬ বছর। ঋতু উৎসব ওই একবার শমীর সূত্রে পালিত হলেও আর উদ্যোগ ছিল না। ১৯২৩ সালে ফাল্গুনী পূর্ণিমায় আশ্রমে অধিবেশন বসল। তখন বসন্ত উৎসব পালন হল। সেই থেকেই শান্তিনিকেতনে শুরু হয়ে গেল বসন্ত উৎসব। প্রতি বছরই ভিন্ন ভিন্ন তিথিতে উদযাপন শুরু হল বসন্তের।
আরও পড়ুন - আবির খেলতে গিয়ে অসবাধানে ফোনে রং? কী দিলে চটজলদি উঠবে জেনে নিন
কবিই নেন দায়িত্ব
এর পর ১৯২৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই শ্রী পঞ্চমীতে আম্রকুঞ্জে প্রথম বসন্ত উৎসব উদযাপন করেন। ১৯৩৭ সালে কবি বেঁচে থাকতেই মাঘী পূর্ণিমায় এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ বসন্তের আগমন ক্ষণে। ওই বছর উৎসবে পরিবেশিত হয়েছিল ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ গানটি।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বদল এসেছে দোলযাত্রা ও হোলিতে। তবে এই শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের ঐতিহ্য আজও অমলিন। বসন্ত উৎসবের দিন আম্রকুঞ্জ ও গৌর প্রাঙ্গণে প্রকৃতিকে আহ্বান জানান পড়ুয়ারা। প্রকৃতির রঙের উৎসবকেই বসন্ত উৎসবের মূল সুরে বেঁধে উদযাপন করেন সকলে।