ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বনাম বিরোধীদের লড়াই প্রত্যাশিতই ছিল। বিরোধীদের এই নিয়ে অনড় অবস্থানের জেরে বিলটিকে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠাতে বাধ্য হয় সরকারপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার জেপিসি’র প্রথম বৈঠকেই তপ্ত হয়ে উঠল পরিবেশ। ৩১ সদস্যের এই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল। এই কমিটির ২১ জন সদস্য লোকসভার এবং ১০ জন সদস্য রাজ্যসভার। এই বৈঠকে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক এবং আইন ও বিচার মন্ত্রকের অফিসাররা খসড়া আইনে প্রস্তাবিত বিভিন্ন সংশোধনী সম্পর্কে সদস্যদের জানিয়ে দেন।
এদিকে হিন্দু মন্দির, উপাসনাস্থল বা দেবোত্তর সম্পত্তির ট্রাস্ট, পরিচালন সমিতিতে অহিন্দু প্রতিনিধি রাখার নিয়ম না থাকলেও ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের রাখার কথা কেন বলা হয়েছে বিলে? এই প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা সোচ্চার হতে থাকেন। তাতে পিছু হটতে শুরু করেন শাসকদলের সাংসদরা। পাল্টা তাঁরা সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ তোলেন। তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিরোধীরা বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু এই কমিটির চেয়ারপার্সন প্রবীণ বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল হস্তক্ষেপ করার পর শান্ত হয় পরিবেশ। তারপর জগদম্বিকা পাল জানান, ৬ ঘণ্টার এই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।
আরও পড়ুন: মশার মারতে প্রমীলা বাহিনী নামাল কলকাতা পুরসভা, কেমন ফল মিলল পুরকর্তাদের হাতে?
অন্যদিকে সংখ্যালঘু সংগঠনের সর্বাধিক সংখ্যক লোককে সুযোগ দেওয়ার কথা নিয়ে এখানে আলোচনা হয়। ওয়াকফের কাছে হস্তান্তর হওয়া সম্পত্তিগুলি পিছিয়ে থাকা মুসলিম এবং মহিলাদের সাহায্য করা উচিত বলেও বৈঠকে ওঠে। ৪৪টি সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হয় এবং ভাল আইন নিয়ে আসা হবে এমন কথাও হয় বলে সূত্রের খবর। তবে বিরোধী সাংসদদের অভিযোগ, ওয়াকফ বোর্ডের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ঘুরপথে হস্তগত করতেই এই বিল এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ‘সংবিধান–বিরোধী’ বিলকে সিলমোহর দেওয়া যাবে না। সরকারপক্ষ বনাম বিরোধী সাংসদদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলাকালীন সম্পূর্ণ নীরব ছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রকের সচিব এবং আমলারা।
এছাড়া এই বিল নিয়ে আরও মতামত নিতে দেশজুড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা বলা হয় বিরোধীদের পক্ষ থেকে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মতামত নেওয়া প্রয়োজন বলেই বক্তব্য বিরোধীদের বলে সূত্রের খবর। তবে জগদম্বিকা পাল নিশ্চিত করেন সদস্যদের যে তাঁরা সকল স্টেকহোল্ডার এবং মুসলিম সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। বিরোধীদের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আপের সঞ্জয় সিং এবং আসাদউদ্দিন ওয়াইসি–সহ অনেকেই ছিলেন। যাঁরা একাধিক ধারা যোগ করতে বলেন এই বিলে। আর কালেক্টরের হাতে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়। একইসঙ্গে অমুসলিম সদস্যদেরও ওয়াকফ বোর্ডে রাখার দাবি করা হয়। ৩০ অগস্ট আবার বৈঠকে বসবে জেপিসি।