হুগলির জিরাট স্কুলের মামলায় এবার কলকাতা হাইকোর্টের রোষের মুখে পড়লেন পঞ্চায়েত প্রধান। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নদী পাড়ে অবস্থিত এই স্কুলটিকে আগেই অন্যত্র সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। গতকাল স্কুলের এক ছাত্রের অসুস্থতা নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানের উপর ক্ষোভ উগরে দেন বিচারপতি।
হুগলির জিরাট খয়রামারি নামে অবৈতনিক এই স্কুলটি নদীর পাড়ে অবস্থিত। কিন্তু, ক্রমাগত পাড়ের ভাঙনের পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত ওই স্কুলে যাচ্ছেন পড়ুয়া এবং শিক্ষকরা। এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে দেখার পরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করেছিলেন। সেই মামলায় আগেই স্কুলটি সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। গত শনিবার হাইকোর্টের ঠিক করে দেওয়া দুজন আইনজীবী কোর্ট অফিসার হিসেবে স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন এক ছাত্র বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। বহুদিন ধরেই তার এই সমস্যা রয়েছে। এমনকি অন্যান্য ছাত্ররাও তার থেকে দূরে থাকছে। যার বলে সে মানসিকভাবে আঘাত পাচ্ছে ওই ছাত্র।
গতকাল মামলার শুনানিতে হাজিরা দিয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান সুচন্দ্রমা রায়। ছাত্রের অসুস্থতার কথা শোনার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাকে প্রশ্ন করেন, ওই ছাত্রের মা লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পান কিনা। তারপর পঞ্চায়েত প্রধান উত্তরে বলেন, তিনি এ বিষয়টি জানেন না। এরপরে ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি পঞ্চায়েত প্রধানকে প্রশ্ন করেন, আপনারা গ্রামে কী করতে আছেন? শুধুই কি ভোট পাওয়ার জন্য আপনারা আসেন? লক্ষীর ভাণ্ডার কিসের জন্য রয়েছে? কীসের জন্য এত প্রচার? এখানেই থেমে না থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনাদের মতো মানুষদের জন্যই সমাজ কল্যাণমূলক প্রকল্প ব্যর্থ হয়।’
পাশাপাশি স্কুলের অবস্থা নিয়েও পঞ্চায়েত প্রধানকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। এরপরে বিচারপতি ওই ছাত্রের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন। চিকিৎসার খরচের হিসাব পরবর্তী শুনানিতে হাইকোর্টের কাছে জানাতে হবে। একইসঙ্গে স্কুলটি সরানো প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে স্কুলটি সরানো হচ্ছে তা পরিদর্শন করতে হবে। এছাড়াও সেখানে অবস্থিত আশেপাশের জঙ্গল পরিষ্কার করতে হবে পঞ্চায়েত প্রধানকে। আগামী ২৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানি।