ডানকুনিতে সিপিএমের প্রকাশ্য় সভা। চারদিনের রাজ্য সম্মেলন শেষে মিটিং। সেই মিটিং তখনও শুরু হয়নি। একে একে মিছিল গুলো আসতে শুরু করেছে। চেয়ার ধীরে ধীরে ভরছে। সিপিএমের মিটিংয়ে সবুজ রঙের চেয়ার দেখে রসিকতা করতে ছাড়লেন না এক লজেন্স বিক্রেতা।
হালকা কথাবার্তা চলছে। মাইকে ঘোষণা হচ্ছে সভাকে সফল করার আহ্বান। নানা নির্দেশ ভাসছে মাইকে। যিনি ঘোষণা করছেন তাঁর পরনে লাল গেঞ্জি। তাতে লেখা চে। দলে দলে লোকজন আসছেন। বেশিরভাগই পঞ্চাশের ওপরে। যুবকদের দেখা নেই সেভাবে।
এমন সময় সামনের চেয়ারের সামনে জটলা। আচমকা চমক ভাঙে অনেকের। সেখানেই তন্ময় ভট্টাচার্য। একে একে কর্মীরা আসছেন। তন্ময়ের সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য কার্যত লাইন পড়ে যায়। একে একে কর্মীরা আসছেন আর সেলফি তোলার জন্য আবেদন। কিন্তু তাঁকে তো দল সাসপেন্ড করেছিল? এপ্রিল মাস পর্যন্ত তো সেই সাসপেনশন অর্ডার রয়েছে বলে খবর। তারপরে তিনি কী করে দলের মিটিংয়ে এলেন?
তবে বামকর্মীরা অবশ্য সেসব সাসপেনশনকে বিশেষ পাত্তা দিতে রাজি নন। ক্রমাগত উঠছে সেলফি। হাত মিলিয়ে যান অনেকেই। দাদা ভালো আছেন তো! কমরেড কেমন আছেন? হাসছেন তন্ময়। মঞ্চে একে একে নেতারা আসছেন। লাল গদি আঁটা চেয়ার। জনতার থেকে তাঁদের দূরত্ব অনেকটাই। মঞ্চে উঠে সেই 'বড় নেতাদের' সঙ্গে সেলফি তোলার সাহস পান না অনেকেই। তবে হাতের সামনে রয়েছেন তন্ময় ভট্টাচার্য।
HT বাংলার তরফে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার উপর তো সাসপেনশন অর্ডার রয়েছে। আপনি সভায় এলেন। দল কিছু বলবে না? তন্ময় বলেন, আমি তো কনফারেন্সের ভেতরে যাইনি। মঞ্চেও উঠিনি। সভায় জনতার মাঝে রয়েছি। এখানে তো আপত্তি থাকার কথা নয়।
এবার প্রশ্ন, সামনেই তো ২৬শের ভোট। ভোটে দাঁড়াবেন? অল্প থেমে যান তন্ময়। দল টিকিট দিলে লড়বেন? তন্ময় বলেন, দল টিকিট দিলে লড়ব। একেবারে অকপট। সভায় তখন মঞ্চ থেকে গান বাজছে, সঙ্কোচেরও বিহ্বলতা নিজেরে অপমান…
ভিড় বাড়ছে সভায়। সেই ভিড়ের মাঝে জনতার মাঝে তন্ময়। আর মঞ্চ আলো করে যাঁরা বসে রয়েছেন তাঁদের সঙ্গে জনতার দূরত্ব অনেকটা। কোথাও যেন সব হিসেব গুলিয়ে যাচ্ছে। ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া সিপিএম। কিন্তু কাদের হাত ধরে? দিশাটা বলতে পারছেন না কেউ। শূন্যের গেরো কাটবে কীভাবে?
কেন তন্ময়কে সাসপেন্ড করা হয়েছিল?
তাঁর কাছে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন এক মহিলা সাংবাদিক। তাঁর কোলের উপর বসে পড়েছিলেন সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। অভিযোগ এমনটাই। এদিকে ফেসবুক লাইভে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন মহিলা সাংবাদিক। এরপরই টনক নড়ে সিপিএমের। একদিকে যখন আরজি কর কাণ্ডে বার বার পথে নামছিলেন বামেরা তখন সিপিএমের নেতার এই আচরণকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবে চারদিকে নিন্দার ঝড়। তবে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে এই আশঙ্কাতেই কার্যত তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম।