হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)-এর কোনও উৎপাদন ইউনিট অন্ধ্রপ্রদেশে স্থানান্তরের সম্ভাবনা নেই। সাফ জানিয়ে দিয়েছে কর্ণাটক সরকার।এনডিএ-র শরিকদল তেলুগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নায়ডুর আবেদনে সাড়া দিয়ে হ্যাল-এর সদর দফতর কর্ণাটক থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে সরাতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। মঙ্গলবার এই খবর প্রকাশের পরেই উত্তেজনা ছড়ায় কর্ণাটকজুড়ে। এরপরে সেই খবর সরাসারি খারিজ করে দিয়েছে সিদ্দারামাইয়ার সরকার।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু অন্ধ্রপ্রদেশে একটি নতুন গ্রিনফিল্ড হ্যাল কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট তেজস এবং অন্যান্য দেশীয় প্ল্যাটফর্মের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তবে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর স্পষ্ট করেছে যে তারা কোনও কারখানা স্থানান্তরের প্রস্তাব দেয়নি।নাইডু প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অন্ধ্র -কর্ণাটক সীমান্ত থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে লেপাক্ষিতে ১০,০০০ একর জমি হ্যাল-এর সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাব করেছেন। সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলির জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও জায়গার প্রয়োজন, যা অন্ধ্রপ্রদেশে সম্ভব। কর্ণাটকে এটি কঠিন হতে পারে।
আরও পড়ুন-চিনের রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, হতাহত বহু, হল ‘মাশরুম-ক্লাউড’
হ্যাল ভারতের শীর্ষস্থানীয় মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা উৎপাদন সংস্থা, বর্তমানে কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু ও তুমকুরুতে প্রধান উৎপাদন কারখানা পরিচালনা করে। এই ইউনিটগুলি ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার এবং প্রশিক্ষণ বিমান, যেমন এলসিএ তেজস এবং প্রস্তাবিত অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু।অন্যদিকে, নাইডুর প্রস্তাবটি কর্ণাটকের নেতৃত্বের তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে হ্যাল-এর উৎপাদন ভিত্তি রাজ্যের মহাকাশ খাতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং এটি সহজে স্থানান্তর বা প্রতিলিপি করা সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার কর্ণাটকের বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী এমবি পাতিল হ্যাল-এর কার্যক্রম স্থানান্তরের গুজব প্রত্যাখ্যান করেছেন।তিনি বলেন, 'কোন মুখ্যমন্ত্রীর হ্যাল কারখানা স্থানান্তরের ক্ষমতা নেই। বেঙ্গালুরুতে কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সম্ভবত নতুন একটি ইউনিট স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা একটি পৃথক বিষয়।' কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেন, ' এটি সম্ভব নয়। হ্যাল স্থানান্তরিত হবে না।'অন্যদিকে, উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার জোর দিয়ে বলেন যে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যে হ্যাল এবং এর সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো রক্ষায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।কর্ণাটকের চিকিৎসা শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রী শরণ প্রকাশ পাতিলও এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, 'হ্যাল আমাদের রাজ্যের গর্ব। আমরা এটি অন্ধ্রপ্রদেশে স্থানান্তরের অনুমতি দেব না। এই প্রতিষ্ঠানটি বিজেপি প্রতিষ্ঠা করেনি। কংগ্রেস সরকার এটি এখানে এনেছিল। যদি এটি সরানোর কোন চেষ্টা হয়, তবে কর্ণাটকের বিজেপি সাংসদদের পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, তারা রাজ্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।'
আরও পড়ুন-চিনের রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, হতাহত বহু, হল ‘মাশরুম-ক্লাউড’
হ্যাল ইতিমধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনার চাহিদা মেটাতে তেজস উৎপাদন বাড়ানোর পথে রয়েছে। সম্প্রতি ৮৩টি এলসিএ এমকে১এ ভ্যারিয়েন্টের জন্য ৬,৫০০ কোটি টাকার অর্ডার অনুমোদিত হয়েছে। ভবিষ্যতে তেজস এমকে২ এবং এএমসিএ-র মতো অর্ডারের জন্য প্রসারিত পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষিত জনশক্তির প্রয়োজন হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এখনও এই সম্প্রসারণ প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে বিবেচনাধীন কিনা তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।