‘আমি যদি আমার স্বামীর কাছে ধর্ষিত হই বা কোনও অচেনা কারও কাছে ধর্ষিত হই বা বিচ্ছিন্ন সঙ্গীর কাছে ধর্ষণের শিকার হই, তাহলে যে অনিষ্ট হয়, সেটা মোটেও আলাদা হয় না। আমি যদি বিবাহিত হই, আর আমার উপরে যদি নৃশংস এবং হিংস্র ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটা কি ধর্ষণ নয়?’
সুপ্রিম কোর্টে বৈবাহিক ধর্ষণের মামলার চূড়ান্ত শুনানিতে এমনই সওয়াল করলেন আইনজীবী করুণা নন্দী। যিনি শীর্ষ আদালতে এক মামলাকারীর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেন যে বৈবাহিক ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে স্বামীদের যে ‘সুরক্ষাকবচ’ আছে, তা মৌলিক অধিকারকে ভঙ্গ করে। কেউ হিংসাত্মক আচরণ করলে সেটাকে গোপনীয়তার আড়ালে ঢেকে রাখা যায় না।
আরও পড়ুন: Animal Marital Rape Scene: অ্যানিম্যালের বৈবাহিক ধর্ষণ সিন নিয়ে জোর বিতর্ক, নীরবতা ভেঙে জবাব ববির
গোপনীয়তার ছুতোয় হিংসার লাইসেন্স মেলে না, সওয়াল করুণার
নিজের যুক্তির স্বপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় উল্লেখ করেন করুণা। যে রায়ে বলা হয়েছিল যে গোপনীয়তার অধিকার আছে বলেই লিঙ্গ-ভিত্তিক হিংসার লাইসেন্স মিলবে না (কেএস পুট্টস্বামী - ২০১৮ সালে গোপনীয়তা মামলার রায়)।
তাঁর সেই সওয়ালের প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি জেবি পাদ্রিওয়ালা প্রশ্ন করেন, যদি সেটাই হয়, তাহলে স্ত্রী যদি যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে না চান, তাহলে স্বামীর কাছে ডিভোর্স ছাড়া আর কি কোনও পথ খোলা থাকবে না?
‘এটা পুরুষ বনাম মহিলার মামলা নয়’
তখন করুণা সওয়াল করেন যে জোর করে শারীরিক স্থাপনের বিকল্প হতে পারে আলোচনা এবং পারস্পরিক সম্মান। তাঁর কথায়, ‘পরদিনের জন্য অপেক্ষা করুন বা আকর্ষণীয় হয়ে উঠুন বা আমার সঙ্গে কথা বলুন। মানুষের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের সংবিধানের রূপান্তর হচ্ছে। এটা পুরুষ বনাম মহিলার মামলা নয়। এটা হল মানুষ বনাম পিতৃতন্ত্রের মামলা।’
‘নো মিনস নো’
একইসুরে এক মামলাকারীর আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস বলেন, 'নো মিনস নো (না মানে না)। যদি কোনও মহিলা না বলেন, সেটা না হয়। যদি বিবাহিত সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করতে হবে।'
আরও পড়ুন: Centre on Marital Rape: বৈবাহিক ধর্ষণ কেন 'ব্যতিক্রমী'? সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বোঝাল কেন্দ্র
অর্থাৎ অতীতের ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ নম্বর ধারার দ্বিতীয় 'ব্যতিক্রম' এবং নয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ নম্বর ধারার দ্বিতীয় 'ব্যতিক্রম'-কে খারিজ করে দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। যে ধারার আওতায় স্ত্রী'র অনিচ্ছা বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলেও স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজুর ক্ষেত্রে ‘সুরক্ষাকবচ’ প্রদান করা হয়েছে।
অন্য যুক্তি কেন্দ্রের
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, এরকম ঘটনার ক্ষেত্রে যদি শাস্তির বিধান থাকে, তাহলে সেটা দাম্পত্য সম্পর্কের উপরে গুরুতর প্রভাব ফেলবে। আর বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের উপরে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। যে সওয়ালের প্রেক্ষিতে মামলাকারীদের মতামতও জানতে চায় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পাদ্রিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ। আগামী ২২ অক্টোবর তাঁদের বেঞ্চে ফের বৈবাহিক ধর্ষণের মামলার শুনানি শুরু হবে।