সাধারণত যে কোনও দেশে উদ্বাস্তুরা সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গাদের অনেকেই অবৈধভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তা যাতে না হয় তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু, এবার একেবারে উল্টো ছবি সামনে এসেছে বাংলাদেশে। দেশের নাগরিকরাই নাকি রোহিঙ্গাদের তালিকায় নাম নথিভুক্ত করছেন। সম্প্রতি এই ধরনের একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। যার ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। এই অবস্থায় নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাঁরা পুনরায় নাগরিকত্ব ফিরে পেতে আবেদন জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: 'উদ্বেগ' প্রকাশ করে ইউনুসকে চিঠি রাষ্ট্রসংঘ প্রধানের, ঢাকায় যাচ্ছেন ১৩ মার্চ
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূলত কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এই ধরনের প্রবণতা দেখা গিয়েছে। শুধুমাত্র ত্রাণ সামগ্রী পাওয়ার লোভে এই সমস্ত নাগরিকরা রোহিঙ্গা তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের তালিকাভুক্তির লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি-সহ আঙুলের ছাপ দিয়েছেন বহু বাংলাদেশি নাগরিক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেছে। কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দাদের অনেককেই মূলত এভাবে নিজেদের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে যখন বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থী আসতে শুরু করেন, সেইসময় নাম তালিকাভুক্ত করার ঘটনা ঘটেছে। আসলে সেই সময় রোহিঙ্গাদের শিবিরে দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর ত্রাণ আসত। তবে এখন সেই ত্রাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে। আর ত্রাণ কমে যাওয়ার ফলে ভুয়ো তালিকাভুক্ত হওয়া এই ব্যক্তিরা পুনরায় বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ফিরে পেতে চাইছেন। কারণ রোহিঙ্গা তালিকায় তাঁদের নাম থাকায় পাসপোর্ট থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিলেই ধরা পড়ে যাচ্ছেন। তাঁদের রোহিঙ্গা হিসেবে বিবেচনা করে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিয়ের একাধিক ঘটনাও ঘটেছে। যার ফলে পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে।
কক্সবাজারের জেলা নির্বাচন আধিকারিক মহম্মদ তোফায়েল হোসেন ওই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই ধরনের ১০০ জনের তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে রয়েছে, যাঁরা রোহিঙ্গা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তবে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এখন তাঁরা সংশোধন করতে আবেদন করেছেন। প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসিরউদ্দিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় কোনওভাবে অন্তর্ভুক্ত না হতে পারে তার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে যাঁরা স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের তালিকায় নাম লিখেছেন, তাঁরা এদেশের নাগরিক হতে পারেন না। বর্তমানে তাঁরা ভুল বুঝতে পেরে সংশোধনের জন্য এখন জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন অফিসে যাচ্ছেন।
এভাবে রোহিঙ্গা তালিকায় নাম নথিভুক্ত করা এক বাংলাদেশি নাগরিক জানান, তিনি ত্রাণের লোভে পড়ে ছবি-সহ আঙুলের ছাপ দিয়ে রোহিঙ্গা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। তাঁর পরিবারের আরও তিন সদস্য একই কাজ করেছেন। তবে এখন তিনি বুঝতে পারছেন একজন বাংলাদেশি হয়েও এখন তাঁরা রোহিঙ্গা হয়ে গিয়েছেন।
এ বিষয়ে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন আধিকারিক তোফায়েল হোসেন কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন শরণার্থী, ত্রাণ কমিশনার অফিসে এই সব লোকেদের নাম রোহিঙ্গা তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। তবে এরফলে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার দুর্দশার চিত্রও প্রকাশ পাচ্ছে বলেই মনে করছে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’।