বাংলাদেশের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ভুঁইয়া কানুকে জুতোর মালা পরিয়ে হেনস্থার ঘটনা সামনে আসতেই দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারকে। এবার সেই ঘটনার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে পালটা নিগৃহীত মুক্তিযোদ্ধাকেই কাঠগড়ায় তুলে দিল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, মঙ্গলবার এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (ওসি) এটিএম আকতার উজ্জামান একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। সেই বিবৃতিতে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, পুরোনো একটি ঘটনার জেরেই কানুকে নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে।
কী সেই ঘটনা?
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের দাবি ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পেশ করা তথ্য অনুসারে, সেই ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮ সালে। সেই সময় স্থানীয় কুলিয়ারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন চলছিল।
অভিযোগ, সেই নির্বাচন চলাকালীনই কোনও একটি গন্ডগোল হয়। যার জেরে আবদুল হালিম নামে এলাকারই এক বাসিন্দাকে নাকি মারধর করেন মুক্তিযোদ্ধা কানু! শুধু তাই নয়, হালিমকে ওই মুক্তিযোদ্ধা টেনে-হিঁচড়ে জলে ফেলে দেন এবং তাঁকে সকলের সামনে অপমান করেন বলেও অভিযোগ। পুলিশের দাবি, চলতি বছর সেই আবদুল হালিমের মৃত্যু হয়।
এদিকে, নানা কারণে কানুও নাকি টানা প্রায় ১০ বছর আত্মগোপন করে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বাড়ি ফিরে এলেও বাইরে খুব একটা বেরোতেন না। কিন্তু, গত ২২ ডিসেম্বর তিনি বাড়ির বাইরে বের হন। সেদিন তিনি স্থানীয় বাজারে গিয়েছিলেন।
পুলিশের দাবি, বাজারে তাঁকে দেখে ফেলেন প্রয়াত হালিমের ভাই আবুল হাসেম। তিনি পার্শ্ববর্তী কুলিয়ারা গ্রামেরই বাসিন্দা। দাবি করা হচ্ছে, দাদার অপমানের বদলা নিতেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা কানুকে হেনস্থা ও অপমান করেন।
আবুল হাসেম প্রথমে কানুকে সেই স্কুলের মাঠে টেনে নিয়ে যান, যেখানে তাঁর দাদাকে ১৬ বছর আগে অপমান করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তারপর বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা পরিয়ে তাঁকেও একইভাবে অপমান করেন হাসেম। সেই ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হতেই চারিদিকে ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়। মুখ পোড়ে ইউনুস প্রশাসনের। আর সেই প্রেক্ষাপটে এবার এই ঘটনার 'নেপথ্য কারণ' প্রকাশ্যে আনল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এও দাবি করা হচ্ছে যে স্থানীয় বাসিন্দারাও পুলিশের পেশ করা তথ্য সমর্থন করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সত্যিই ২০০৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কানুর হাতে চরম লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছিল আবদুল হালিমকে। এবং ২২ তারিখের ঘটনা আদতে সেই পুরোনো ঘটনারই ফলশ্রুতি।
বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন সূত্রে আরও দাবি করা হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা কানুর বিরুদ্ধে হত্যা, তথ্য প্রযুক্তি, মারামারি ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনা-সহ অন্তত ন'টি মামলা ঝুলে রয়েছে।