আবারও দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ধনকুবের ইলন মাস্কের দ্বন্দ্ব।এবার প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কর ছাঁটাই এবং ব্যয়ের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ উপস্থাপনের চেষ্টাকে ‘জঘন্য কাজ’ বলে মন্তব্য করলেন ইলন মাস্ক। আগেও মার্কিন প্রশাসনের কর সংক্রান্ত নতুন বিলের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন টেসলা কর্তা। ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে সরে আসার কথাও ঘোষণা করেছিলেন। ট্রাম্প যতই তাঁকে গুরুত্ব দিন না কেন, তিনি যে 'পরম বন্ধু'-র সিদ্ধান্তে খুশি নন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই টেক জায়ান্ট।সব মিলিয়ে রাতারাতি বন্ধু থেকে যেন যুযুধান দুই পক্ষ হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প-মাস্ক।
মঙ্গলবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন ইলন মাস্ক। তাতেই ট্রাম্পের ওই বিলের সমালোচনা করেন তিনি। ইলন মাস্ক লেখেন, ‘আমি দুঃখিত, কিন্তু আমি আর এটা সহ্য করতে পারছি না। এই বিশাল, জঘন্য, শুয়োরের মাংসে ভরা কংগ্রেসের ব্যয় বিলটি একটি জঘন্য, জঘন্য কাজ। যারা এই পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাঁদের লজ্জা হওয়া উচিত। কারণ আপনি জানেন যে আপনি ভুল করেছেন। আপনি জানেন।’ এরপরেই পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে হোয়াইট হাউস।হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট পাল্টা জবাবে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই জানেন এই বিলের ব্যাপারে ইলন মাস্ক কী অবস্থান নিয়েছেন। তবে, মাস্কের এই মন্তব্য তাঁর মতামত পরিবর্তন করে না। এটি একটি বৃহত্তর এবং যথাযথ সিদ্ধান্ত। এবং আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট এই ক্ষেত্রে অটল রয়েছেন।’
মাস্কের এই বিল নিয়ে আপত্তি নতুন নয়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, 'কোনও বিল বিগ হতেই পারে। আবার সেটা বিউটিফুলও হতে পারে। কিন্তু আমার জানা নেই একসঙ্গে দুটোই হতে পারে কিনা।' এদিকে, সম্প্রতি আরও একটি পোস্টে তাঁকে লিখতে দেখা গিয়েছিল, 'এই বিল ইতিমধ্যেই বিপুল আকার ধারণ করা বাজেট ঘাটতিকে আরও বাড়িয়ে ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পরিণত করবে।’ কংগ্রেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া বানিয়ে ছাড়বে বলেও দাবি তাঁর।
উল্লেখ্য, কর বিল নিয়ে দ্বন্দ্বর জেরে কর সম্প্রতি ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির পদ ছেড়েছেন ইলন মাস্ক। ওই বিলকে ‘বিগ বিউটিফুল’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু প্রকাশ্যেই ওই বিলের সমালোচনা করেন মাস্ক। ওই বিলটিতে ব্যাপক কর হ্রাস এবং কঠোর অভিবাসন নীতির প্রস্তাব থাকায় মাস্ক তা নিয়ে আপত্তি জানান। সেই সঙ্গেই ওই বিলকে সরকারের অপচয় কমানোর লক্ষ্যের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করছিলেন তিনি।
কী আছে বিলটিতে?
'ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল' নামে পরিচিত এই বাজেট প্রস্তাবটি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উদ্যোগ। বিলে রয়েছে, ২০১৭ সালের করছাড় অব্যাহত রাখা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের জন্য ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ, জাতীয় ঋণের সীমা ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো।তবে এসব খরচের ভার সামলাতে গিয়ে বিলটি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কড়া কাটছাঁট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) বলছে, এর ফলে মেডিকেইডে ৬৯৮ বিলিয়ন ডলার কমানো হবে, খাদ্য ভর্তুকি কর্মসূচি (এসএনএপি) থেকেও ২৬৭ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দেওয়া হবে।আর এই বিল নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দুই পক্ষেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেক সংসদ সদস্য আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এতে নিম্নআয়ের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।