'আপনার জন্য গোটা দেশ লজ্জিত।' ভারতীয় সেনার কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে কুমন্তব্যের জন্য মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহের বিরুদ্ধে তদন্তে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ভারতীয় সেনার কর্নেল কুরেশির ধর্ম নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করায় গত বুধবার বিজেপির মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিল মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হন মন্ত্রী বিজয়। চাপে পড়ে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলেন বিজয় শাহ। কিন্তু তাঁর সেই ক্ষমাপ্রার্থনা গ্রাহ্যই করল না শীর্ষ আদালত।
সোমবার মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং এন কোটিশ্বর সিংয়ের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, 'আপনার ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই। আপনি একজন জনপ্রতিনিধি, একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। আপনার কথার ওজন রয়েছে। আপনি অশ্লীল ভাষা ব্যবহারে কোনওমতে আটকেছেন। আপনি নোংরা ভাষা ব্যবহার করতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আপনি একটি শব্দও খুঁজে না পাওয়ায় থেমে গিয়েছেন।'
মন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে বিচারপতিরা জানান,‘এটা কী ধরনের ক্ষমা চেয়েছেন আপনি? ক্ষমা চাওয়ার তো একটা ধরন থাকে। মাঝে মাঝে মানুষ আইনি প্রক্রিয়া এড়াতে বিনয়ী ভাষা ব্যবহার করেন। কুমিরের কান্না কাঁদেন। আপনার এই ক্ষমা চাওয়া কী ধরনের? আপনি দেখাতে চাইছেন, আদালত আপনাকে ক্ষমা চাইতে বলেছে। নিজের মন্তব্যের জন্য এখনও পর্যন্ত আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইতে পারলেন না কেন?'
এরপরেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে মধ্যপ্রদেশ সরকারকে ৩ আইপিএস অফিসারকে নিয়ে একটি সিট গঠন করতে হবে। এরমধ্যে এক মহিলা অফিসারও থাকবেন। তাঁরা গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখবে। ২৯ মে-র মধ্যে সিট-কে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ স্পষ্ট বলেছে, ‘আমরা এমন দেশে থাকি, যেখানে আইনের শাসন চলে। আর সেই শাসন উঁচু-নীচু সবার জন্য সমান।’ সর্বোচ্চ আদালত আরও জানিয়েছে, 'সামরিক অভিযানের কিছুক্ষণ পরেই শাহের মন্তব্য তাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটি সেনাবাহিনীর জন্য আবেগের বিষয়। তারা সামনের সারিতে রয়েছে। আমরা অন্তত তাদের সম্মান জানাতে। সমগ্র দেশ আপনার জন্য লজ্জিত।'
মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য
সম্প্রতি মন্ত্রী বিজয় শাহ বলেন, 'ওরা আমাদের হিন্দু ভাইদের পোশাক খুলে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীজি ওদের (জঙ্গিদের) বোনকে ওদের বাড়িতে হামলার জন্য পাঠিয়েছেন। ওরা (জঙ্গিরা) আমাদের বোনকে বিধবা করেছে, তাই মোদিজি ওদের সম্প্রদায়ের বোনকেই ওদের পোশাক খুলে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন।' কর্নেল কুরেশির নাম না নিলেও মন্তব্য যে তাঁকে উদ্দেশ্য করেই তা বুঝতে বাকি ছিল না কারও। বিজয়ের ওই মন্তব্যকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয় কংগ্রেস। তবে বিতর্ক তুঙ্গে উঠতেই বিজয় দাবি করেন, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি কর্নেল কুরেশির কাছে ১০ বার ক্ষমা চাইতেও প্রস্তুত।