ভোটমুখী বাংলায় (যদিও এখনও বছরখানেক বাকি) এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে সামিল হয়ে অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেও আশ্বস্ত করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা তথা দেশজুড়ে চলতে থাকা ওয়াকফ প্রতিবাদের মধ্যেই বললেন, 'আমি জানি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সংখ্যালঘুদের মনে একটা দুঃখ আছে। আপানারা ভরসা রাখুন, বাংলায় এমন কিছু হবে না যাতে বিভাজন হয়। সবাইকে একসঙ্গে থেকে বাঁচতে হবে। জিও, জিনে দো (বাঁচুন, বাঁচতে দিন)।' একইসঙ্গে, বুধবারের (৯ এপ্রিল, ২০২৫) এই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকেই একসঙ্গে মিলেমিশে বাঁচার বার্তা দিলেন মমতা।
উল্লেখ্য, প্রবল বিতর্ক ও বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও সংসদের দুই কক্ষে ইতিমধ্য়েই ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হয়ে গিয়েছে। সেই ঘটনার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্য়েই তাতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরও করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, এই বিল পাস হতেই বাংলা তথা ভারতের নানা প্রান্তে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে আন্দোলন, বিক্ষোভ চলছে। তাতে যেমন - ইসলামি সংগঠনগুলি সামিল হয়েছে, তেমনই অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলিও যোগ দিয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মামলা রুজু করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
অন্যদিকে, ওয়াকফ নিয়ে যে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তার প্রায় প্রত্যেকটি বৈঠকেই বিলের বিরোধিতায় সরব থেকেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এহেন প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে যখন বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন, সেখানে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় তৃণমূল যে আরও সুর চড়াবে, তেমন একটা আভাস আগেই ওয়াকিবহাল মহল দিয়ে রেখেছিল। বুধবার সেই সম্ভাবনাই সত্যি প্রমাণিত করলেন মমতা স্বয়ং। মনে করিয়ে দিলেন, তিনি সকলেরই 'দিদি'!
আগামিকাল (বৃহস্পতিবার - ১০ এপ্রিল, ২০২৫) মহাবীরজয়ন্তী। সেই উপলক্ষে বুধবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে 'নবকার মহামন্ত্র দিবস' পালন করা হয়। যা মূলত সংখ্যালঘু জৈন সম্প্রদায়ের রীতি। সেই মঞ্চ থেকেই ফের একবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও একতার বার্তা দেন মমতা। ওয়াকফ প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সম্পত্তির রক্ষা করার প্রতিশ্রতি দেন তিনি। একইসঙ্গে, সমস্ত ধরনের প্ররোচনা এড়িয়ে চলারও আবেদন করেন।
মমতাকে বলতে শোনা যায়, 'আপনারা সবাই একসঙ্গে বাঁচার কথা বলুন। কেউ কেউ রাজনৈতিক প্ররোচনা দেয়। আমি বলছি, দিদি আছে, দিদি আপনাদের রক্ষা করবে। আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। কেউ উস্কানিতে পা দেবেন না।'
একইসঙ্গে বিভাজনের রাজানীতির সমালোচনা করেন মমতা। মনে করিয়ে দেন, এদেশে বিভাজন সৃষ্টির ইতিহাস অনেক পুরোনো। বিভাজনের বিনিময়েই স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ভারতবর্ষ। এত দিন পর সেই বিভাজনকেই রাজনৈতিক অস্ত্র করা হচ্ছে বলে বার্তা দেন মমতা। তিনি বলেন, 'বিভাজন তো আমরা করিনি। সেই স্বাধীনতার সময়ে হয়েছে। কেউ কেউ আপনাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে উস্কানি দিচ্ছে। তাতে পা দেবেন না।'
যদিও মমতার এই 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি'র বার্তাকে আগাগোড়া 'তোষণের রাজনীতি' বলেই পালটা আক্রমণ করে এসেছে গেরুয়া শিবির। সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে তাদের বক্তব্য, নয়া এই আইন আদতে দরিদ্র মুসলমানদের সহায়ক হবে। যদিও মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশের দাবি, এই আইন হাতিয়ার করে আদতে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি কেড়ে নেওয়ার ছক কষেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের এনডিএ সরকার।