সবচেয়ে দামি জুতোর দাম মাত্র ১২ টাকা! সময়টা ১৯২৭ সাল। ভারতে বাটা সংস্থা আসে কুড়ির দশকের মাঝামাঝি সময়ে। তার আগে কলকাতার চৌরঙ্গীতে অবস্থিত দাওয়ার এইচ কাজী অ্যান্ড কোম্পানি ছিল বাটার স্টকিস্ট এবং একমাত্র এজেন্ট। তবে ভারতে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই বিপুল খ্যাতি অর্জন করে এই সংস্থা।
মাত্র ২১ বছর বয়সে
টমাস বাটার ধরে পথ চলা শুরু হয় এই সংস্থার। তখন টমাস বাটার বয়স মাত্র ২১ বছর। উন্নতমানের জুতো তৈরি ও সরবরাহের জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই খ্যাতি অর্জন করেছিল বাটা কোম্পানি। ১৯৩১ সালে বাটা শু কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩২ সালে এটি কলকাতার কাছে কোন্নগরে শুরু হয় এই সংস্থার উৎপাদন।
আরও পড়ুন - ঠোঁটে এমন আলসার দেখা দিচ্ছে? সমাধান মাত্র ২ টাকায়, হেসেলের এই উপাদান কাজে লাগান
সবচেয়ে দামি জুতো
১৯২৭ সালে বাটার সবচেয়ে দামি জুতো ছিল বাছুরের চামড়া দিয়ে তৈরি পুরুষদের জুতো। তার দামই ছিল ১২ টাকা ১৫ আনা। যা তখনকার দিনে সোনার দামের চেয়ে কিছুটা কম। ২০২৫ সালের হিসেবে এর দাম হিসেব করলে দাঁড়াবে প্রায় ৩০,০০০ টাকার কাছাকাছি! বাটা থেকে বাচ্চাদের চামড়ার জুতো পাওয়া যেত ৪ টাকা ১৫ আনা দামে। এছাড়া, বাচ্চাদের সাদা ক্যানভাস জুতোর দাম ছিল ১ টাকা থেকে ১৫ আনা।
নিজস্ব কারখানায় জুতো তৈরি শুরু
১৯২৯ সাল নাগাদ, ভারতে বাটা স্টকিস্টরা তাদের নিজস্ব কারখানায় জুতো তৈরি শুরু করে। "স্থানীয়ভাবে তৈরি, হাতে সেলাই করা, বিশেষভাবে আপনার জন্য" তাদের বিজ্ঞাপনে প্রচারিত হয়েছিল। দাওয়ার এইচ কাজী অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি জুতোগুলি কাজী নামে বিক্রি হত। কিন্তু ক্রোম লেদারের তৈরি জুতোগুলির দাম ৮ টাকা ১৫ আনা থেকে শুরু হত। অন্যদিকে হাভানা ব্রাউন উইলো ক্যালফ লেদারের জুতো হলে তার দাম থাকত ১৮ থেকে ১৫ আনা পর্যন্ত।
বাটা সংস্থার ইতিহাস
বাটা সংস্থার আসল ব্যবসা শুরু হয় চেকোস্লোভাকিয়ায়, ১৮৯৪ সালে। ১৮৯৫ সালের গরমকালে টোমাস আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে তিনি চামড়ার পরিবর্তে ক্যানভাস থেকে জুতো তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। এই ধরনের জুতো অম সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। সংস্থাটি ৫০ জন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করে। চার বছর পর, বাটা সংস্থায় প্রথম বাষ্প-চালিত মেশিন স্থাপন করা হয়।এর ফলে জুতো তৈরির পদ্ধিতর দ্রুত আধুনিকীকরণ হয়। ১৯০৪ সালে টোমাস তিনজন কর্মী নিয়ে বোস্টনের বাইরে অবস্থিত লিন শহরে যান আমেরিকান উৎপাদন পদ্ধতি অধ্যয়ন ও বোঝার জন্য। যা তখন গোটা বিশ্বের জুতো শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। ছয় মাস পর তিনি ফিরে আসেন এবং একই যান্ত্রিক উৎপাদন কৌশল চালু করেন। এর সুবাদেই বাটা কোম্পানি ইউরোপের জুতো প্রস্তুতকারকদের মধ্যে এক নম্বর হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন - বাড়িতে একরত্তি খুদে রয়েছে? অসহ্য গরমেও এসি চালানোর সময় খেয়াল রাখুন ৪ টিপস
১০০ বছর পেরিয়ে
ভারতে আসার পর ধীরে ধীরে নিজেদের কারখানাতেই জুতো তৈরি শুরু করে বাটা সংস্থা। স্টকিস্টদের থেকে মূল সংস্থার হাতে আসে উৎপাদন ক্ষমতা। আজ ১০০ বছর পেরিয়েও অক্ষুণ্ণ রয়েছে বাটার জুতোর ব্যবসা। বেড়েছে আউটলেট সংখ্যা ও পরিষেবার গুণমান। দাম এখনও সকলের সাধ্যের মধ্যে। বাজেট প্রাইজ থেকে ভিআইপিদছর জুতো, সবরকম কালেকশনই রয়েছে এই সংস্থায়।