করোনা সংক্রমণের আবহে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি আমরা প্রত্যেকে। ইচ্ছা, অনিচ্ছা, কামনা, বাসনা, চিন্তা, দুশ্চিন্তা মিলে একাধিক চিন্তাভাবনার আনাগোনা চলছে মনের মধ্যে। সঙ্গী বা জীবনসঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টিও সকলের মনে খেলা করছে। কিন্তু এই অতিমারীর যুগে আগের চেয়েও অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে প্রত্যেককে। সামাজিক দূরত্ব বিধি, মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ করা— এ সব তো রয়েছেই। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সত্যিই কী শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত?
এখানে জানিয়ে রাখা যাক, সেক্স করতে পারেন, কিন্তু কিছু কিছু নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। নিরাপদ সেক্সের উপায় সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে জানিয়ে রাখা ভালো, সুস্থ সেক্সুয়াল অ্যাক্টিভিটির এখনও ততটাই গুরুত্ব রয়েছে, যতটা ছিল এই অতিমারীর আগে।
তবে লেসিওর সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, সেক্সের ফ্রিকোয়েন্সি আগের তুলনায় এখন অনেক কমেছে। বর্তমানে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা চিন্তার কারণ হলেও, এটা কখনও ভুলে যাওয়া চলবে না যে, সেক্স একটি অসাধারণ ওয়ার্কআউট এবং স্বস্তি দেয়। এর ফলে দুশ্চিন্তা ও অ্যাংজাইটিও দূর করা যেতে পারে। ভালো ঘুমে সাহায্য করার পাশাপাশি, মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন ও অক্সিটোসিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। সমীক্ষায় প্রকাশিত যে, ১০-২০ সেকেন্ডের আলিঙ্গন ও চুম্বন মস্তিষ্ক থেকে এই ফিল-গুড কেমিক্যালের মুক্তি ঘটাতে সাহায্য করে। এই কঠিন সময় শারীরিক ঘনিষ্ঠতা মুড বুস্টারের কাজ করতে পারে।
তাই অতিমারীতে কী ভাবে নিরাপদে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা যায় তা জেনে নিন—
সম্মতিই এখন মূলমন্ত্র- নিজের সঙ্গীর হাত ধরতে বা তাঁকে জড়িয়ে ধরে আদরে ভরিয়ে দিতে উৎসুক হলেও, আগে তাঁর সম্মতি নিন। প্রাক-অতিমারীর যুগেও এর প্রয়োজনীয়তা ছিল, কিন্তু বর্তমানে এই সম্মতি গ্রহণ আগের চেয়েও অনেক বেশি জরুরি। কারণ স্পর্শ বা ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে বর্তমানে প্রত্যেকেই অধিক সচেতন। তাই সঙ্গীর স্বচ্ছন্দবোধকে গুরুত্ব দিন। সরাসরি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বে, সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলুন, তাঁরা কোন পরিস্থিতিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তা বোঝার চেষ্টা করুন।
স্বাদ-গন্ধ বিষয় আলোচনা করুন- করোনার সামান্য উপসর্গ দেখা গেলেও টেস্ট করিয়ে নিন। এ বিষয় নিজের সঙ্গীকে জানাতে ভুলবেন না। করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক লিপ্ত হওয়ার ফলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তাই কারও সঙ্গে সেক্সের আগে, সততার সঙ্গে স্পষ্ট ভাবে সমস্ত বিষয় আলোচনা করে নিন। স্বাদ বা গন্ধ পাচ্ছেন কি না, সে বিষয়েও আলোচনা করুন। এমনকি শেষ কবে করোনা টেস্ট করিয়েছেন, তা-ও জানাতে ভুলবেন না।
ঝুঁকি থেকে সাবধানে থাকুন- বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে, যতটা ট্রান্সপারেন্ট থাকা যায়, তত ভালো। সঙ্গীর সঙ্গেই যদি কেউ বসবাস করেন, সে ক্ষেত্রে করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা ততটা বেশি থাকে না। কারণ সমস্ত বিষয় ব্যক্তিগত ভাবে চোখে রাখা যায়। বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বিধি পালন ও হাত স্যানিটাইজ করতে থাকলে, সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। কিন্তু এ সব পালন না-করলেই, বিপদ ডেকে আনতে পারেন। আবার সেক্সের সময় কন্ডোম ব্যবহার করতে ভুলবেন না। এর ফলে করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি কমে। শুধু তাই নয়, সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড রোগের সম্ভাবনাও কম থাকে।
প্রযুক্তিকে কাজে লাগান- করোনা লকডাউন বা অন্য কোনও কারণে নিজের সঙ্গী থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। কিন্তু সেক্সের ইচ্ছাও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সেক্সটিং বা ভিডিও ডেটসের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে দেখেছেন কী? সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার জন্য এই উপায় অনেকের ক্ষেত্রেই কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। তবে নিজের ছবি বা নিউড ফটো শেয়ার করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে, এটা মাথায় রাখবেন। এমন কোনও সমস্যায় পড়লে সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ জানাতে দেরি করবেন না।
নিজের সঙ্গীকে ভালোভাবে চেনার চেষ্টা করুন- কঠিন সময় এটি। কিন্তু স্বস্তির নিঃশ্বাসের প্রয়োজন রয়েছে সকলেরই। সঙ্গীর থেকে দূরে থাকলে বা দেখা করার সুযোগ না-পেলে অনলাইন ডেট করুন, ভিডিও কলে এক সঙ্গে বসে খাবার খান। দেখা করার সম্ভাবনা থাকলে মাস্ক পরে বেরোন, সামাজিক দূরত্ববিধি পালন করুন।
এই করোনা অতিমারীর সময় কালে যতটা সম্ভব নিরাপদে থেকে সঙ্গী বা জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। মনে রাখবেন, এই কঠিন সময়ও একদিন কেটে যাবে।