'ওয়ারেন্টি পিরিয়ড'-এর মধ্য়ে খারাপ মালের 'রিপ্লেসমেন্ট' নিতে গিয়েই কপাল পুড়ল দুষ্কৃতীর। ধরা পড়তে হল পুলিশের হাতে। আর, তাকে জেরা করেই বেআইনি অস্ত্র কারবারের সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বিপণন কৌশল সামনে এল। যা দেখেশুনে চোখ কপালে উঠছে ঝানু গোয়েন্দাদেরও!
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, অন্যান্য সামগ্রীর মতোই এখন দিশি আগ্নেয়াস্ত্র কিনলেও মিলছে ওয়ারেন্টি। যার অর্থ হল - 'মাল' যদি ঠিক মতো কাজ না করে, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য়ে তা সম্পূর্ণ বদলে নতুন 'মাল' দেওয়া হবে!
এখানেই শেষ নয়। এখনকার দিনে গাড়ি থেকে শুরু করে টিভি, ফ্রিজ - সবেরই যেমন নানা মডেল থাকে, তেমনই দিশি পিস্তল, ওয়ান শটারেরও নিত্যনতুন নামকরণ করা হচ্ছে! তার কিছু নমুনা হল - মিনি ঠাগ, সাইলেন্ট স্টিং, রকিং কার্ভ প্রভৃতি।
এটুকু পড়েই যদি চোখ কপালে ওঠে, তাহলে জেনে রাখুন,অবাক হওয়ার রসদ এখনও বাকি রয়েছে। কারণ, আজকাল বেআইনি অস্ত্র ব্যবসায়ীরাই তাদের আসল কারবার উল্লেখ করেন ভিজিটিং কার্ড ছাপাচ্ছে! নিষিদ্ধ বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপে তৈরি করা হচ্ছে 'ওয়ারেন্টি গ্রুপ'। কোনও ই-কমার্স সংস্থা থেকে পণ্য কেনার পর যেভাবে রিভিউ লেখা যায়, এই ওয়ারেন্টি গ্রুপগুলিতেও তেমনটা করা যায়। যাতে বাকিরাও সেগুলো পড়ে 'সমৃদ্ধ' হতে পারে!
তথ্য বলছে, সম্প্রতি এ রাজ্যের নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে একাধিক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের জেরা করেই এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
রাজ্য পুলিশের এক গোয়েন্দা কর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, 'আগে দেশি অস্ত্র মানেই ছিল জোড়াতালি দেওয়া লোহার তৈরি কিছু পাইপগান আর ওয়ান শটার। এখন সেসব গিয়েছে। অস্ত্র সরবরাহকারীরা এখন ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কাজকর্ম করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রের সঙ্গে মিলছে ভিজিটিং কার্ড!'
তিনিই জানিয়েছেন, সম্প্রতি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ এক যুবককে নদিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেই দুষ্কৃতী জেরায় পুলিশকে জানায়, ১০টি 'দেশি কাট্টা' কিনেছিল সে। যার মধ্যে তিনটি ঠিক মতো কাজ করছিল না। 'দোকানদার'কে ফোন করে সেকথা জানায় ওই দুষ্কৃতী। তাতে ওই 'দোকানদার' বলেন, 'দাদা, চিন্তা করবেন না, কাল বিকেলেই নতুন একটা দিচ্ছি!' কিন্তু, বিধি বাম! সেই রিপ্লেসমেন্ট নিতে গিয়েই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় ওই দুষ্কৃতী।
এছাড়াও, চলতি মে মাসেই (২০২৫) মুর্শিদাবাদের নওগাঁ থেকে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ১৩টি ম্যাগাজিন এবং ১০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় হাবুল শেখ নামে এক বেআইনি অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতারও করা হয়। এই হাবুলও পুলিশের কাছে রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টির কথা স্বীকার করেছে।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাজিদ ইকবাল এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'বেআইনি অস্ত্র ব্যবসায় নিত্যনতুন কৌশল বদলে ব্যবসার চেষ্টা চলছে। অনেক যুবক এই অবৈধ এবং অপরাধমূলক কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন। সেটা উদ্বেগজনক। তবে পুলিশের লাগাতার অভিযানে এদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি অস্ত্র কারখানায় হানা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এই প্রবণতার রাশ টানা যাবে।'