আজ, বৃহস্পতিবার আবারও নবান্নে বৈঠকে বসে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। আর মনে করিয়ে দিলেন একদিন আগের ঘটনাও। বুধবার রাতে উত্তরবঙ্গের দাপুটে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দেবাশিস প্রামাণিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেবাশিস হলেন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। যে ডাবগ্রাম–ফুলবাড়ির বিধায়ক ছিলেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। দেবাশিস ছিল তাঁর ছায়াসঙ্গী। যিনি সরকারি জমি জবরদখল করে রাখার পিছনে ছিলেন। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ দেবাশিস প্রামাণিকের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বৈঠক থেকে জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আরও একবার সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে এই দেবাশিস প্রামাণিক ডাবগ্রাম–ফুলবাড়ির এককথায় ‘ডন’ হয়ে উঠেছিলেন। মাথার উপর বিধায়কের ছাতা আছে বলে যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। আর এই অভিযোগ এসে পৌঁছেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে। তারপরই গ্রেফতার হন দেবাশিস। এই বিষয়ে আজ নবান্নে বৈঠকের সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও নেতা যদি ইন্ধন দেন, তাঁকে গ্রেফতার করবেন সঙ্গে সঙ্গে। সে যে দলেরই হোক। কোনও পুলিশ যদি বলে, তাঁকে পুলিশকেও গ্রেফতার করা হবে। উপরতলার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করবে। ডাবগ্রামে দেখেছেন, আমি জেলা প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করিয়ে দিয়েছি। আমি রাজীব কুমারকে একটি সিস্টেম বানাতে বলেছি। সেটা বানিয়ে আমাকে দেবে।’
আরও পড়ুন: ‘ওটা ভাল কাজ হয়েছে’, নবান্নের বৈঠকে আবার মুখ্যমন্ত্রীর সুনজরে চলে এলেন সুজিত বসু
অন্যদিকে এই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চান তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবেন না। আর যে বা যারা করবে তাদের রেয়াত করা হবে না। তাই তাঁর বক্তব্য, ‘সরকারি জমি বেচে দিচ্ছিল। ওই জমিগুলির মিউটেশন হবে না। জমি মাফিয়াদের সঙ্গে দলের কারও কারও যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশেরও কারও কারও মদত রয়েছে। জমি মাফিয়াদের কারবার বন্ধ করতে বলেছিলাম। ডাবগ্রামে দেখেছেন জেলা সভাপতিকে গ্রেফতার করিয়েছি। সরকারি জমি নিয়ে ২–৩ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিলাম। এসব চলবে না। ওখানে আরও কিছু জমি হস্তান্তর হয়েছে। এসজেডিএ থেকে তালিকা নাও। গত ৭ বছর কতটা আইনত হয়েছে কতটা নয়। কোন পলিটিক্যাল পার্টি পুকুর ভরাট করে বাড়ি বানিয়েছে। ওই বাড়িটি আরএসএসের। ল্যান্ড রেকর্ড একবার দেখে নেওয়া হোক।’
এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী যে নিজের দলের কোনও ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতার করিয়ে দিতে পারেন, সেটা অনেকেই ভাবতে পারছেন না। কিন্তু দেবাশিস প্রামাণিকের ঘটনা এবার অনেককে ভাবাবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি জমি বাঁচাতে পাঁচটি পথ বাতলে দিয়েছেন। সেগুলি হল—বিএলআরও অফিসের সামনে দালাল চক্রের আনাগোনা বন্ধ করতে হবে। সরকারি জমিতে সাইনবোর্ড লাগাতে হবে। সাইনবোর্ডে লিখতে হবে ‘এই জমির মালিক রাজ্য সরকার’। নিয়মিত সরকারি জমি পরিদর্শন করতে হবে অফিসারদের। আর জমি ও জলাশয়ের ছবি নানা অ্যাঙ্গল থেকে তুলে রাখতে হবে।