তিনি নাকি রূঢ়, তিনি নাকি অহংকারী- বিরাট কোহলির নামে অনেকেই এরকম বলে থাকেন। আর সেটা যে কত বড় ভুল, তা আবারও বুঝিয়ে দিলেন বিরাট। রবিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পরে মহম্মদ শামির মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন ভারতীয় তারকা। হাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাওয়ার পরে ট্রেডমার্ক ‘সাদা ব্লেজার’ পরে মাঠে ঘুরছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। সেইসময় বিরাটের সঙ্গে মা ও পরিবারের সদস্যদের দেখা করিয়ে দেন শামি। হাসিমুখে এসে শামির মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন বিরাট। পিঠ চাপড়ে দেন শামির মা। তারপর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। যে ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেল। বিরাটের কাজে আপ্লুত হয়ে গিয়েছেন নেটিজেনরা। তাঁরা বলছেন, ‘এটাই ভারতীয় সংস্কার।’
‘সঠিক মানুষকেই আইডল হিসেবে বেছে নিয়েছি’, আপ্লুত নেটপাড়া
একইসুরে অপর এক নেটিজেন বলেন, 'বিরাটের সবথেকে দারুণ ব্যাপার হল যে নিজের জীবনে সবকিছু অর্জন করার পরেও উনি এত অমায়িক।' অপর একজন বলেন, 'আমার সঠিক মানুষকেই আইডল হিসেবে বেছে নিয়েছি।' এক নেটিজেন আবার বলেন, ‘এটাই আমাদের সংস্কার। এটার কারণেই আমরা সবাই বিরাট কোহলিকে এত ভালোবাসি। মহম্মদ শামির মায়ের পা ছুঁলেন বিরাট। তারপর তাঁর সঙ্গে ছবি তুললেন। একেই বলে মূল্যবোধ। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরা মুহূর্ত এটা।’
এক নেটিজেন আবার বলেন, ‘মা তো মা হয়ে থাকেন।’ একজন আবার বলেন, 'এরকম সব দৃশ্যই ভারতের ট্রফি জয়কে আরও স্পেশাল করে তোলে।' অপর একজন বলেন, ‘এটাই ভারত এবং ভারতের সংস্কৃতি। অনেকের তাতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু ভারত এবং ভারতের সংস্কৃতি বরাবরই এরকম থাকবে।’
ভারতীয়দের দাপটে চাপে পড়ে যান কিউয়িরা!
রবিবার টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে সাত উইকেটে ২৫১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। যদিও ইনিংসের শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল যে ৩০০ রান তুলে ফেলবেন কিউয়িরা। পরবর্তীতে ভারতীয় স্পিনারদের গুঁতোয় প্রবল চাপে পড়ে যান তাঁরা। তখন আবার মনে হচ্ছিল যে ২৩০ রানের নীচেই আটকে যাবেন।কিন্তু সাতে নেমে মাইকেল ব্রেসওয়েলের ৪০ বলে অপরাজিত ৫৩ রানের সুবাদে ২৫০ রানের গণ্ডি পার করে যান। কিউয়িদের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেন ডারিল মিচেল। তবে ১০১টি বল খেলেন। ২৯ বলে ৩৭ রান করেন রাচিন।
ভারতের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন দুই স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী এবং কুলদীপ যাদব। ১০ ওভারে ৪৫ রান খরচ করেন বরুণ। কুলদীপ ১০ ওভারে খরচ করেন ৪০ রান। রবীন্দ্র জাদেজা ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে এক উইকেট নেন। অক্ষর প্যাটেল কোনও উইকেট না পেলেও আট ওভারে মাত্র ২৯ রান খরচ করেন। তবে ভারতীয় পেসাররা কিছুটা বেশি রান খরচ করে ফেলেন। নয় ওভারে ৭৪ রান দিয়ে এক উইকেট নেন মহম্মদ শামি। হার্দিক পান্ডিয়া তিন ওভারে ৩০ রান খরচ করেন।
ভারতের দুর্দান্ত জয়!
পেসারদের কারণে ভারতের লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে গেলেও শুরুটা দুর্দান্ত করেন রোহিত শর্মারা। ট্রেডমার্ক রোহিত স্টাইলে খেলতে থাকেন ভারত অধিনায়ক। শুভমন গিল সেরকম ছন্দে না থাকলেও রোহিত কার্যত একাহাতে ইনিংস টানছিলেন। দু'জনে মিলে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ রান তুলে ফেলেন। অর্ধশতরান পূরণ করে ফেলেন রোহিত। বিনা উইকেটে ১০০ রানের গণ্ডিও পেরিয়ে যায় ভারত।
কিন্তু ১৯ তম ওভারে গ্লেন ফিলিপসের অবিশ্বাস্য ক্যাচে খেলার মোড় ঘুরে যায়। গিল যে শটটা মেরেছিলেন, সেটা নিশ্চিত চার ছিল। ফিলিপস সেটাও ক্যাচ ধরে দেন। সেখান থেকেই হোঁচট খেতে শুরু করে টিম ইন্ডিয়া। ১৮.৩ ওভারে ভারতের স্কোর ছিল বিনা উইকেটে ১০৫ রান। সেখানে ২৬.১ ওভারে ১২২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে। এক রানে আউট হয়ে যান বিরাট কোহলি। লাগাতার চাপের মুখে রান না ওঠায় বড় শট মারতে গিয়ে ৭৬ রানে আউট হয়ে যান রোহিত।
তারপর রীতিমতো রক্তচাপ বেড়ে যায় ভারতের। শ্রেয়স আইয়ার, অক্ষর প্যাটেলরা ভারতকে টানতে থাকলেও নিউজিল্যান্ড একাধিক সুযোগ তৈরি করে। একটা সময় যে ম্যাচটায় ভারত সহজে জিতবে বলে মনে হচ্ছিল, তাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ছয় বল বাকি থাকতেই চার উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় ভারত। জয়সূচক শটটা মারেন জাদেজা। তারপরই উচ্ছ্বাসে ভেসে যান ভারতীয় ক্রিকেটাররা।