চরিত্র নিয়ে সব সময়ই এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসেন দিব্যজ্যোতি দত্ত। তাই কখনও শান্ত 'বাঁধবাবু ঋভু', তো কখনও 'নির্ভীক' হয়েও ভূতের ভয়ে চরম ভিতু চরিত্রে পর্দায় নজর কেড়েছেন তিনি। আবার ছোট পর্দার প্রথম সারির নায়ক হয়েও, অল্প বয়সেই দুই মেয়ের বাবার চরিত্রে দ্বিধাহীন ভাবে নিজেকে মেলে ধরেছেন। তার মাঝেই অভিনেতা জানিয়ে ছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে ‘গৌরাঙ্গ’ হয়ে ধরা দেবেন তিনি। তার জন্য বেশ কয়েক মাস ধরে জোর কদমে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন নায়ক। কিন্তু তার মাঝেই হঠাৎ করে 'অনুরাগের ছোঁয়া' মেগাতেই দেবী কালী রূপে চমক দিলেন দিব্যজ্যোতি। বাংলা মেগার ক্ষেত্রে এ দৃশ্য সত্যি বিরল। কারণ নায়িকাদের মাঝে মধ্যেই নানা দেবী রূপে তুলে ধরা হলেও, নায়কদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে না। এই ছক ভাঙতে অনেকটা সাহস লাগে, তবে দিব্যজ্যোতি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বললেন, 'এই ভাবে নিজেকে মেলে ধরার জন্য আগে বিশ্বাস করতে হবে নিজেকে।'
পর্দায় দেবী রূপে নিজেকে মেলে ধরার ক্ষেত্রে কি আপনার মনে কোনও দ্বিধা কাজ করছিল?
দিব্যজ্যোতি: একেবারেই না। আসলে এই ভাবে নিজেকে মেলে ধরার জন্য আগে বিশ্বাস করতে হবে নিজেকে। কিন্তু এটা বিশ্বাস করাও খুব একটা জটিল বিষয় নয়। কারণ আমরা সকলেই অর্ধনারীশ্বরের কথা জানি। আসলে শিব আর শক্তি তাঁরা তো আলাদা নন, কোথাও গিয়ে তাঁরা একই, কেবল তাঁদের প্রকাশ বিভিন্ন। আর সেই একই ভাবে আমাদের আত্মাও তো জীবনের শেষে পরমআত্মায় বিলিন হয়ে যায়। সেখানে নারী-পুরুষ অর্থাৎ লিঙ্গের কোনও ভেদ নেই। স্ত্রী-পুরুষ এইসব চেহারার বর্ণনা মাত্র, আত্মার বর্ণনা নয়। আত্মা প্রতি জন্মে কেবল দেহ পরিবর্তন করে। তাই আমাদের অন্তরের মধ্যেই সব সত্ত্বাই রয়েছে। সেই জায়গা থেকেই এভাবে নিজে সাজিয়ে তুলতে মনের মধ্যে কোনও দ্বিধা আসেনি, তাঁর বদলে একটা শক্তির আভাস পেয়েছি।
শক্তির আভাস! কেমন ছিল সেই অনুভূতি?
দিব্যজ্যোতি: ভীষণ ভাবে পজেটিভনেস কাজ করছিল আমার মধ্যে। নিজেকে যখন ওভাবে আয়নায় দেখলাম, ভিতর থেকে একটা শক্তি আসছিল।
কিন্তু ভাবনাটা কীভাবে এল?
দিব্যজ্যোতি: আসলে এই ভাবনা নির্মাতাদের। ওঁরা কয়েক মাস আগে থেকেই আমাকে পর্দায় কালী বেশে আনার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ওঁরা আমার উপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাননি। তাই তখন এই বিষয়ে, আমার মত আছে কিনা তা জানতেও চেয়েছিলেন। আমি ওঁদের সেই সময় জানাই, এটা নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। বরং এরকম ভাবে নিজেকে পর্দায় মেলে ধরতে পারব ভেবে বেশ উৎসাহিতই বোধ করছিলাম। কিন্তু তখন সময়ের অভাবে তা সম্ভব হয়নি। পরে আবার ওঁরা এটা নিয়ে ভাবেন, আমার থেকে ফের জানতে চান আমার এইভাবে পর্দায় আসতে কোনও সমস্যা আছে কিনা। আমি ওঁদের জানাই আমার কোনও সমস্যা নেই। তারপর দীপঙ্কর দা (দীপঙ্কর দে, রূপটান শিল্পী), তিনি পুরো লুকটা করেন।
কতক্ষণ সময় লাগলো 'কালী' রূপে সাজতে?
দিব্যজ্যোতি: এই লুকটা আমরা যে সময় দিয়ে করেছি, তার থেকেও আরও বেশি সময় নিয়ে করা যেতে পারত। কিন্তু মেগাতে অনেকটা চাপ থাকে। আমাদের ৭ দিনের কাজ ব্যাঙ্কিং করতে হয়। তার মধ্যে এখন অনেকটা চাপ চলছে। কারণ আমাকে ছবির জন্যও ছাড়তে হবে। সামনের কিছু দিন ওঁরা আমার ডেট পাবেন না। তাই কাজের ব্যস্ততাটা খুব। এই সব কিছুর মধ্যে দীপঙ্কর দা ওঁর দক্ষ হাতে দেড় থেকে দু' ঘণ্টার মধ্যেই সবটা করেছেন। এটা করতে আসলে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা লাগে।
কিন্তু গরমটা তো খুব, ভারী শাড়ি, গয়না তার উপর আবার ওই ভারী চুল, খুব কষ্টকর ছিল নিশ্চয়ই…
দিব্যজ্যোতি: কষ্ট তো সব কিছুতেই আছে, কিন্তু ভালো কাজ করতে হলে এইটুকু কষ্ট করতেই হবে। আর আমি যে পরচুলাটা পড়েছিলাম ওটা সত্যিকার চুল দিয়ে বানানো নয়, সিন্থেটিকের ছিল, তাই ওটার ভার আরও বেশি ছিল। তাই কোথাও গিয়ে হয়তো একটু বেশি কষ্ট হচ্ছিল চুলটার জন্য। কিন্তু কাজটা যেহেতু ভালো ভাবে হয়ে গিয়েছে, তাই ওইটুকু কষ্ট করতে আমি রাজি। একেবারে মা কালীর লুকটা তুলে ধরার জন্য এটা প্রয়োজন ছিল।
আর আপনার মা, তিনি কী বললেন আপনাকে এই বেশে দেখে?
দিব্যজ্যোতি: যেদিন আমাদের শ্যুট হচ্ছিল, আমি আমার একটা ছবি তুলে মাকে পাঠিয়েছিলাম। প্রথমে মা বুঝতেই পারেননি। পরে আমার চোখ দেখে বোঝেন যে ওটা আমি। তারপর মেগা সম্প্রচারের সময়ও মা দেখেন, আমাকে বলেন, 'ভালো হয়েছে।' অনেক দর্শকও আমাকে এমনটাও বলেছেন যে, ‘প্রথমে দেখে বুঝতেই পারিনি’।
হ্যাঁ, আসলে বাংলা মেগায় তো সচরাচর খুব একটা নায়কদের দেবী রূপে দেখা যায় না…
দিব্যজ্যোতি: হ্যাঁ, সেটাও বলেছেন অনেকে।
তবে অনেকে আবার আপনার এই লুকের সঙ্গে 'পুষ্পা'র তুলনাও টানছেন...
দিব্যজ্যোতি: 'পুষ্পা' অতুলনীয়, সেটার সঙ্গে কোনও তুলনা হয় না। আর আমি নিজে হলে গিয়ে ৩ বার 'পুষ্পা' দেখেছি। 'পুষ্পা' উপর কোনও কথা হবে না। তবে 'পুষ্পা'র সঙ্গে এই লুকটার একটা বড় পার্থক্য রয়েছে। কারণ ওখানে 'পুষ্পা' মায়ের রূপ নিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেখানে আল্লু অর্জুনের চুল ওঁর মতোই রাখা হয়েছিল। কিন্তু মেগাতে 'সূর্য' লম্বা চুল পড়ে একেবারে মেয়ের রূপেই এই মা কালী লুকে ধরা দিয়েছিল।
তবে ভালোর পাশাপাশি খারাপটাও থাকে, বেশি কিছুজনকে নেতিবাচক মন্তব্যও করতে দেখা গিয়েছে...
দিব্যজ্যোতি: সকলের হতে এখন ফোন। তার মধ্যে সমাজমাধ্যমটা একটা ওপেন প্ল্যাটফর্ম। আর সকলেই নিজের মতামত রাখার অধিকার আছে। সবটাই যে সবার ভালো লাগবে তা তো নয়। এখানে ওভাবে কাউকে আটকানোও যায় না। যাঁর ভালো লেগেছে তিনি ভালো বলেছেন, যাঁর খারাপ লেগেছে তিনি খারাপ বলেছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তাই আমার মনে হয় না এটা নিয়ে ভেবে খুব একটা কিছু লাভ হবে। যাঁদের যাঁদের খারাপ লেগেছে তাঁরা তাঁরা খারাপ বলেছে, এটা খুব স্বাভাবিক।