'হরি মন মজায়ে লুকালে কোথায়…', 'বিনোদিনী: এক নটীর উপাখ্যান' ছবিতে ব্যবহৃত এই গান ইতিমধ্যেই মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। গানটি শুনতে গিয়ে অনেকেই হয়ত জানার চেষ্টা করছেন, কে গেয়েছেন এই গান? অনেকে ইতিমধ্যেই গায়িকাকে চিনেও নিয়েছেন। ইউটিউবেও ছবির গানের নিচে জ্বলজ্বল করছে গায়িকা শুচিস্মিতা চক্রবর্তীর নাম। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন ২০২১ সালের স্টার জলসা 'সুপার সিঙ্গার' জয়ী গায়িকা শুচিস্মিতাই গেয়েছেন গানটি। বিনোদিনী-তে প্লে-ব্যাক, গান নিয়ে স্বপ্নপূরণের নানান কথা Hindustan Times Bangla-র সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন শুচিস্মিতা।
'হরি মন মজায়ে লুকালে কোথায়…', গানটি গাওয়ার প্রস্তাব কীভাবে, কখন পেলেন?
শুচিস্মিতা: ২০২৩-এ আমার কাছে এই গানটি গাওয়ার প্রস্তাব আসে। তবে আমায় স্ক্র্যাচ গাইতে বলা হয়েছিল। আমাকে সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ স্য়ার ডাকেন। বলেন ‘তুই আয়, নটী বিনোদিনীকে নিয়ে একটা ছবি হচ্ছে, সেখানে একটা স্ক্র্যাচ গাইতে হবে।’ যেদিন প্রথম গিয়েছিলাম, সেদিও গানটা একেবারেই রেডি ছিল না। ২ ফেব্রুয়ারি ফাইনালি গাই ( ডেটটা মনে আছে কারণ এটা আমার কাছে ভীষণ স্পেশাল)।সেদিনও কিন্তু গানটা পুরো তৈরি ছিল না। একদিকে তৈরি হচ্ছিল, আর আমি গাইছিলাম। আমি প্রথম থেকেই জানতাম, এটা অন্যকেউ গাইবে, আর আমি স্ক্র্যাচ গাইছি।
এটা গানটি কীর্তন অঙ্গের গান। আমি কিন্তু কীর্তন খুব একটা শিখিনি। তবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের টপ্পাঙ্গের গান গাওয়ার জন্য দু-একটা শিখেছিলাম। তবে শুনেছি অনেক। আর এটা সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ স্যার খুব সুন্দরভাবে শিখিয়েছেন। এরপর গানটা গেয়ে সেদিন বাড়ি চলে আসি। তারপর এই গত দুর্গাপুজো (২০২৪) এর ঠিক আগে সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ স্য়ার জানান, যে আমার গানটাই আছে। মানে গাওয়ার দেড় বছর পর জানতে পারি।
আপনার গাওয়া গানটাই থাকছে, এটা প্রথম শুনে কী মনে হয়েছিল?
শুচিস্মিতা: প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি। কারণ এই ছবিতে শ্রেয়া ঘোষাল, রেখা ভরদ্বাজের মতো শিল্পীরা গেয়েছেন, সেখানে আমারও গান থাকবে! সত্যিই ভাবিনি। আর এটা যেখানে এত বড় ব্য়ানারের ছবি, সেখানে বড় কেউ গাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। পরে যেদিন রামদা (পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায়)র সঙ্গে দেখা হল, আর রুক্মিণীদি (রুক্মিণী মৈত্র)র সঙ্গে দেখা হল ওঁরা আমায় বললেন, এই গানটা ওঁরা নামী কাউকে দিয়েও গাইয়েছিলেন। কিন্তু আমার ওই স্ক্র্যাচ গাওয়া গানেই ছবির শ্যুট হয়ে গিয়েছিল। মানে আমার গানেই রুক্মিণীদি পারফর্ম করেন। তাই এরপর যখন অন্য কেউ গেয়েছেন, তখন হয়ত আমার গানটা ওঁদের কানে বসে গিয়েছিল, তাই এটা রেখে দেওয়া হয়। ওই যে কথায় আছে 'পড়ে পাওয়া ষোল আনা'। এই গানটা আমার কাছে তেমনই। সত্য়িই আশাই করিনি, এই সুযোগ পাব! (হাসি)
আসলে স্ক্র্যাচ গাওয়ার পর সেটা শুনে মূল গায়িকা গান রেকর্ড করেন। কিংবা যে স্ক্র্যাচ গাইছে, পরে সে গাইলেও আবারও সেটা রেকর্ড হয়। তবে এক্ষেত্রে সেটা হয়নি।
গানটি রিলিজের দিন তো ছিলেন?
শুচিস্মিতা: হ্যাঁ, সেটাও একটা ভীষণ সুন্দর অভিজ্ঞতা। ১৯ জানুয়ারি যেদিন গানটা বের হল। সেদিন আমিও রামদা-রুক্মিণীদির সঙ্গে বেলুড়মঠে যাই। বেলুড়মঠের প্রেসিডেন্ট মহারাজের আশীর্বাদ পেয়েছি, যেটা আমি স্বপ্নেও কখনও ভাবিনি। আগেও বেলুড় মঠে গিয়েছি, তবে ওঁর সাক্ষাৎ পাইনি। প্রেসিডেন্ট মহারাজ সবসময় দেখাও দেন না। তবে সেদিনই ঘটনাচক্রে ছিলেন। এরপর আমরা ওখান থেকে গৌরীয় মঠে যাই। সেখানে খোল-করতাল সহকারে খুব সুন্দরভাবে গানটি রিলিজ হল। ওই যে রামদা-রুক্মিণী দি নাচছিলেন, আমিও ছিলাম সেখানে। একটা অদ্ভুত সুন্দর অভিজ্ঞতা। এখনও ভাবতে পারছি না যে আমি ওখানে ছিলাম! পুরো বিষয়টাই আমার কাছে এখনও স্বপ্নের মতো।
এটাই কি প্রথম প্লে-ব্যাক?
শুচিস্মিতা: নাহ, এটা প্রথম নয়। আমি টুকটাক গেয়েছি। ফেলুবক্সীতে গেয়েছি 'কাটে না জিয়া' বলে একটা গান। তবে সেখানেও পুরুষ কণ্ঠই বেশি। অনেক পড়ে গিয়ে আমার গলা আছে। তবে প্রথম প্লে-ব্যাক করি ২০১১ সালে 'পারাপার' বলে একটা ছবিতে। তবে সেটায় শুধু অডিও ভার্সান আছে। এছাড়াও বেশকিছু সিরিয়ালের টাইটেল ট্র্যাক, কিছু ছবি ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর আমি গেয়েছি। তবে সেই অর্থে এককভাবে বিনোদিনীর এই গানই প্রথম। যেটা এভাবে পরিচিতি দিচ্ছে।
২০২১-এর সুপার- সিঙ্গার চ্যাম্পিয়ন ছিলেন? তাহলে তারও আগে প্লে-ব্যাক করেছেন?
শুচিস্মিতা: ২০১২তে সারেগামাপা-তে গিয়েছিলাম। তবে খুব বেশিদূর এগোয়নি। প্রথম ১৫-তে ছিলাম। তবে সেখানেই গ্রুমার হিসাবে সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ স্যারকে পেয়েছিলাম। তখন থেকেই আলাপ। আসলে রিয়েলিটি শো বিষয়টা আমার এক্কেবারেই ভালো লাগে না। গানের প্রতিযোগিতা বিষয়টা আমার পছন্দ ন। যে যাঁর নিজের মতো মন খুলে গাইবে, প্রতিযোগিতী কীসের! সারেগামাপা-র পর হয়ত 'সুপার সিঙ্গার'-এ যেতামও না। স্টুডিয়ো, গান তৈরি এসবের সঙ্গে জুড়ে থাকার চেষ্টা করেছি। গেয়েওছিলাম কিছু সিরিয়ালে। তবে মাঝে কোভিডের জন্য বাড়িতে বসে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, ভীষণ একটা মন খারাপের মধ্যে কাটছিল। তাই বাবা-মাই বলেছিলেন সুপার সিঙ্গার-এ যেতে, গেলাম।
গান শেখা কীভাবে?
শুচিস্মিতা: আমার বাড়ি মেদিনীপুর শহরে। বাড়িতে গানের পরিবেশ ছিল। জ্যেঠু-জ্যেঠিমা, দাদারা, বোন গাইতেন। যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, তখন ওখানেই গান শেখা শুরু করি। রবীন্দ্রসঙ্গীত, পুরাতনী, এইসব। তার আগে আবৃত্তি শিখতাম। তারপর পরবর্তী সময়ে কলকাতায় এসে গান শেখা শুরু করি কল্য়াণ সেন বরাটের কাছে। ওঁর মতো গুরু পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। উনি শুধু গান শেখান নয়, মানুষ তৈরি করেন। ললিত কলাতে শিখেছি। আর এখন গুরুজী মানে অজয় চক্রবর্তীর কাছে শিখছি। শেখাটা চালিয়ে যেতে চাই
গান নিয়েই তাহলে সমস্ত স্বপ্ন?
শুচিস্মিতা: হ্যাঁ, গানই সব। আর অন্য কোনও কিছু করতেও চাই না। প্লে-ব্য়াক করাই স্বপ্ন ছিল, একটু একটু করে সেটা পূরণ হচ্ছে।
‘হরি মন মজায়ে’ গানটি গাওয়ার দৌলতে দেব, রুক্মিণী, রামকমলের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, কাকে কেমন লাগল?
শুচিস্মিতা: দেবদার সঙ্গে বিশেষ আলাপ বা কথা হয়নি। তবে রুক্মিণীদির সঙ্গে হয়েছে। খুব সুন্দর, ভালো মানুষ। আর তাই হয়ত এমন একটা চরিত্রটা এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। রামদাও খুব ভালো। আমাকে তো সেই অর্থে সেভাবে কেউ চেনেই না, মানে একেবারেই বিখ্যাত নই। তবুও ওঁরা আমাকে ভীষণ গুরুত্ব দিয়েছেন। ছবির প্রচারেও নিয়ে গিয়েছেন।
আর দেবদার সঙ্গে প্রিমিয়ারে আলাপ। একজন ওনাকে বলেন যে আমিই গেয়েছি। তখন বলেছিলাম আমিও কিন্তু মেদিনীপুরের। এরই মাঝে অনেক ভিড় হয়ে যায়। তবে তারও ফাঁকে উনি চেঁচিয়ে জিগ্গেস করেন, মেদিনীপুরের কোথায়? বর কী করে? খুব ভালো লেগেছিল সেদিন…।
--------