সরকারি–বেসরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। আর তাই রাজ্যের নানা প্রান্তে বেরিয়ে পড়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা। উত্তর থেকে দক্ষিণ মানুষের ঢল নেমেছে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে শুরু করে দার্জিলিং, কার্শিয়াং হয়ে কালিম্পং, মিরিকে ভিড় উপচে পড়ছে। তেমনই ভিড়ের ঢেউ আছড়ে পড়ছে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে। মন্দারমণি, তাজপুরেও ভিড় আছে। কিন্তু জনমানবশূন্য অবস্থা দেখা যাচ্ছে গজলডোবায়। এখানে পর্যটকরা কার্যত আসেনি বলেই খবর। তাই গ্রীষ্মের ছুটিতে অন্যান্য জায়গায় পর্যটক উপচে পড়লেও সেতু বন্ধ থাকায় পর্যটকশূন্য হয়ে রয়েছে গজলডোবা। আর তার জেরে সেখানে ব্যবসায় ধস নেমেছে। এখন কী করবেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা? এটাই ঘুরপাক খাচ্ছে।
এদিকে তিস্তা ব্যারেজের সেতু বন্ধ হয়ে রয়েছে বলে খবর। আর তার জেরে যাওয়ার পর কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই ভেঙে পড়েছে গজলডোবার পর্যটন এবং ব্যবসা। উত্তরবঙ্গের সর্বত্র পর্যটক ঠাসা হলেও গজলডোবায় পর্যটক নেই। সুতরাং সেখানে চারদিকে এখন শুনশান নিস্তব্ধতা। এটাই চিন্তায় ফেলেছে ব্যবসায়ীদের। গত ২৭ এপ্রিল থেকে সংস্কার করার জন্য তিস্তা ব্যারেজের সেতু দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। শুধু ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাচ্ছে। তার জেরে ডুয়ার্স কিংবা পাহাড় থেকে আসা পর্যটকরা এই গজলডোবায় পা রাখছেন না। বরং সেবক রোড হয়ে সরাসরি চলে যাচ্ছেন শিলিগুড়ি। স্থানীয় দোকানদার পবিত্র মণ্ডল বলেন, ‘লাটাগুড়ি, ওদলাবাড়ি অথবা মাদারিহাট থেকেও স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকরা আসতেন গজলডোবায়। এখন কেউই আর আসছেন না।’
আরও পড়ুন: মঙ্গলাহাটে আবার বিধ্বংসী আগুন, কালো ধোঁয়ায় ঢাকল এলাকা, দমকলের আটটি ইঞ্জিন নেভাল
অন্যদিকে গজলডোবা একটি পর্যটন কেন্দ্র। সেখানে পর্যটক শূন্য হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের। কারণ এখানে ব্যাটারিচালিত গাড়ি, সাইকেল রাইড, নৌকাবিহার পরিষেবা এখন সম্পূর্ণ স্তব্ধ। এমনকী পাখি বিতান অভয়ারণ্যের ৭২টি নৌকা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। নৌকা চালকদের কপালে ভাঁজ এবং হতাশা দেখা দিয়েছে। এই আবহে ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি নিমাই মণ্ডলের বক্তব্য, ‘ছুটির মরসুমে মাত্র সাতজন পর্যটক এখনও পর্যন্ত এসেছেন। বেলাকোবা হয়ে গজলডোবা পৌঁছনর দীর্ঘ পথ বেহাল এবং শর্টকাট রাস্তাও এখন পর্যটকদের উৎসাহিত করছে না।’ সুতরাং পর্যটক শূন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তাছাড়া পর্যটক শূন্য পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় রোজগার কমে গিয়েছে। কবে তা ঠিক হবে? সেটা কেউ বলতে পারছেন না। গাড়ি চালক অশোক দাসের কথায়, ‘গাড়ি, সাইকেল সব তৈরি ছিল। কিন্তু পর্যটকদের দেখা মিলছে না। ব্যবসা বন্ধ হওয়ার মুখে পড়েছে। সেতু সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ হতে ১৪০ দিন সময় লাগবে। আর তা হলে, উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে। সংসার চালানোই দায় হবে।’ গজলডোবা আজ নিঃশব্দ। কারণ পর্যটকদের কলরব নেই। পর্যটকরা এখানে এসে সবজি, তিস্তার বোরলি মাছ খেতেন। এখন বাজার প্রায় বন্ধের মুখে। একটি সেতু সবটা ঘেঁটে দিয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।