ক্রিসমাসের ছুটির আগে সদ্য মুক্তি পেয়েছে ৪টি বাংলা ছবি। ‘খাদান’, ‘সন্তান’, ‘চালচিত্র’ আর ‘৫ নম্বর স্বপ্নময় লেন’। এই মুহূর্তে পুষ্পা-২ ঝড়ের মাঝেও সবকটি ছবি নিয়েই দর্শকদের থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া মিলেছে। তবে তারপরেও এই ৪ ছবির নির্মাতাদের মধ্যে ক্রমাগত রেষারেষি বাড়ছে। বিশেষ করে লড়াইটা হচ্ছে 'খাদান' বনাম 'সন্তান'-এর। প্রায় র💝োজই দুই ছবি নির্মাতাদের একে অপরকে আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে। আর এবার এই পরিস্থিতিতে মুখ খুললেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিত্ব অরিত্র দত্ত বণিক।
ঠিক কী বলছেন অরিত্র?
অরিত্র দত্ত বণিক বলেন, ‘টালিগঞ্জকে নিয়ে এই মুহূর্তে প্রচণ্ড বিতর্কের জায়গা তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্𒁏তে বিভিন্ন খবরের কাগজের হেডলাইন হচ্ছে ৪টি ভিন্ন ঘরা⭕নার বাংলা ছবির রিলিজ নিয়ে। ৪টি ছবি নিয়েই দর্শকদের ভালো প্রতিক্রিয়া মিলছে। তবে এরপর যত দিন যাবে হয়ত এই ৪টে ছবির মধ্যে কোনটি আগে কোনটি পড়ে থাকবে। হয়ত যেটা পিছিয়ে আছে, সেটা সামনের সারিতে চলে আসবে, আবার যেটা সামনের সারিতে আছে, সেটা পিছিয়ে গেল, এইসব চলবেই। অন্য বাজারের মতো এই বাজারেও প্রতিযোগিতা আছে, সেটা থাকবেও, এটা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু যেটা হচ্ছে, বিভিন্ন ছবির কলাকুশলীরা একে অপরকে খুব খারাপভাবে আক্রমণ করছেন। এটার সঙ্গে আমি একেবারেই সহমত নই। তার কারণ আমি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি সহজভাবে, যদিও বিষয়টা কঠিন।’
এরপরই অরিত্র বলেন, ‘আপনারা প্রত্যেকেই কেনাকাটা করেন, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে যান, দেখবেন কোকাকোলার ভেন্ড💯িং মেশিনের পাশে পেপসির ভেন্ডিং মেশিন রাখা থাকে, আবার দেখবেন মমনজিনিস বদলে মিও অ্যামোরে দোকান রয়েছে। আবার স্যামসাং-এর পাশে ভিভো কিংবা অপোর দোকান রয়েছে। এগুলো ইচ্ছা করেই করা হয়, কারণ এরা প্রতিযোগী। প্রত্যেকেই একই ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করে। এগুলো দেখে মনে হতে পারে এরাঁ কি তবে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করার জন্য করেছে? নাহ, বিভিন্ন মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ দীর্ঘ গবেষণা করে দেখেছেন, কোনও একটা জিনিসের একটা ব্র্যান্ডের দোকান থাকলে যা বিক্রি হবে, পাশাপাশি থাকলে দুজনের মিলিত সেল ৩০ শতংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে…। এর পিছনে একটা মনস্তত্ব আছে.., বিজ্ঞান আছে। আর সেই বিষয়টি সব ব্র্যান্ডই উপভোগ করে।’ আর এই মনস্তাত্বিক বিষয়টিও ফেসবুক ভিডিয়োতে এবার ব্যাখ্যা কর🐎ে বোঝান অরিত্র দত্ত বণিক।
অরিত্রর কথায়, ‘বিভিন্ন জিনিসের ব্র্যান্ডের এই মনস্তাত্বিক বিষয়টি বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আজকে এই ৪টি বাংলা ছবি একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জড়িয়েছে। কে কত বেশি মানুষকে আকর্ষণ করতে পারবে, কার বক্স অফিস কালেকশন কত হবে, এটা খুব স্বাভাবিক একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা। এতে কোনও অন্যায় নেই। আর এই ৪টি ছবি একসঙ্গে মুক্তি পাওয়ার কারণে যেটা হয়েছে, সেটা হল অন্য সমস্ত ভাষার ছবির শো কমিয়ে সেখানে বাংলা ছবিগুলিকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। তাতে ৪টে বাংলা ছবিই অন্য ভাষার ছবꦏিকে টপকে সামনের সারিতে এসেছে।’
অরিত্র আরও বলেন, ‘তবে অন্যান্য বাজারে প্রভাবের গল্প থাকে, এখানেও আছে। আজকে যেমন দেবের প্রোডাকশন থেকে খাদান মুক্তি পেয়েছে কিংবা রাজ চক্রবর্তী ব্র্যান্ড থেকে সন্তান মুক্তি পেয়েছে। আর এখানে যখনই কোনও বড় ব্র্যান্ডের ছবি মুক্তি পায়, তখন ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে তা✃রা অপেক্ষিত অনামী প্রযোজকদের থেকে বেশি সুবিধা পায়। তবে অন্যরাও যে একেবারেই সুবিধা পাবে না, তাও কিন্ত না।
তবে যেটা খারাপ হচ্ছে, সেটা হল একজন অন্যজনকে খুবই কুৎসিতভাবে আক্রমণ করছেন, টোন টিটকিরি চলছে। ওঁরা এমন করছেন যেন ওঁ🍬রা নিজেরাই নিজেদের শত্রু। এই ৪টে ছবি প্রতিযোগিতায় রয়েছে মানে কিন্তু কেউ কারোর শত্রু নয়। প্রতিযোগী ও শত্রু কথা দুটির পার্থক্য আছে। প্রতিযোগিতা করে বাজার বাড়ানোটাই এখানে উদ্দেশ্য। তবে হ্যাঁ, দেবের ব্য়ানারে খাদ🏅ান নিশ্চয় অনেক বেশি হল পাবে. আবার রাজ চক্রবর্তীর ব্র্যান্ডের জন্য সন্তানও অনেক হল পাবে। তুলনামূলক ভাবে মানসীদির ছবিটা হয়ত কম হল পাবে, বা প্রতীম ডি গুপ্তার ছবিটাও হয়ত কম হল পাবে।
তবে যাঁরা ডিস্ট্রিবিউটর তাঁরা কিন্তু কেউ মূর্খ বা বোকা নন। প্রথম ১ সপ্তহ চলার পর তাঁরা যদি দেখেন, যে খাদান কিংবা সন্তান যোগ্য ব্য়বসা করতে পারছে না, তাহলে কিন্তু তাঁরা জোর করে ছবিগুলি চালাবেন না। কারণ ডিস্ট্রিবিউটরও তো আখেরে ব্যবসায়ী। কেউ দান করছেন না। যে ছবিটা ভালো টিকিট বিক্রি করছে, স্বাভাবিকভাবেই সেই ছবিটা পরে বেশি হল পাবে। যে খারাপ পারফর্ম করবে, তাকে🌱 নামিয়ে দেওয়া হবে। এটা নতুন ঘটনা নয়। সব ইন্ডাস্ট্রিতেই এটা হয়। কেউ কিছুই পাবে না এটা হতে পারে না। এখানে পুরো ক্ষমতা কনজিউমার বা কাস্টমারের হাতে রয়েছে।’
অরিত্রর কথায়, ‘এখ♉ন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ, ইউটিউবারদের যুগ, তাই প্রভাব খাটিয়ে কিছু হবে না। যার যেটা ভালো লাগবে, সেটা মুখে মুখে ছড়াবেই। তাই আমার মনে হয়, যাঁরা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোকজন তাঁরা দয়া করে একে অপরের আক্রমণ, টোন টিটকারি করবেন না। কারণ কেউ কারোর শত্রু নন, এটা প্রতিযোগিতা। এমন প্রচুর ছবি দেখেছি, ২-৩ সপ্তাহ পর বক্স অফিস পাল্টে গিয়েছে, অনেক কম বাজেটের ছবিও বড় ছবিকে টেক্কা দিয়ে দিয়েছে। এই ৪টে ছবি থেকে যেটা প্রাপ্তি হবে, বাংলা ছবির বাজার বাড়বে। আরও বিনিয়োগ আসবে। আমাদের যেমন ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম মেকারদের দরকার, তেমন দেবের মতো স্🔯টারকেও দরকার। খাদান, সন্তানের মতো ছবিও দরকার, আবার স্বপ্নময় লেনের মতোও ছবিও দরকার। আবার প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের মতো পরিচালককেও দরকার। তবে এই বাজারের মধ্যে বেশি ছবি না হলে মুশকিল। আগে যেখানে ১০০ টা ছবি হত, এখন সেখানে ৩০টা ছবি হচ্ছে। এই জায়গা পূরণ করতে প্রতিযোগিতা আনতে হবে, তবে শত্রুতা রাখলে মুশকিল।’