ভারতের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তানের জন্য ১০০ কোটি ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এবার পাকিস্তানকে বেলআউট ফান্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে ১১টি শর্ত আরোপ করেছে তারা। এমনটাই দাবি করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে। আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক, বহিরাগত ও সংস্কার লক্ষ্যগুলির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
রবিবার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএমএফ পাকিস্তানের বেলআউট কর্মসূচির পরবর্তী ঋণ দেওয়ার জন্য ১১টি নতুন শর্ত আরোপ করেছে। নতুন শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে ১৭.৬ ট্রিলিওনের বাজেটের সংসদীয় অনুমোদন, বিদ্যুৎ বিলে ঋণ পরিশোধের সারচার্জ বৃদ্ধি এবং তিন বছরের বেশি পুরনো ব্যবহৃত গাড়ি আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুসারে, শনিবার প্রকাশিত আইএমএফের স্টাফ লেভেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা যদি অব্যাহত থাকে বা আরও খারাপ হয়, তবে তা এই প্রোগ্রামের আর্থিক, বৈদেশিক এবং সংস্কার-সংক্রান্ত উদ্দেশ্যগুলির জন্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।' প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত দুই সপ্তাহে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত বাজারের প্রতিক্রিয়া সে ভাবে হয়নি। শেয়ার বাজার তার সাম্প্রতিক বেশিরভাগ লাভ ধরে রেখেছে ও মধ্য গতিতে এগোচ্ছে।
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের মতে, আইএমএফ পাকিস্তানের বেলআউট প্রোগ্রামে ১১টি নতুন শর্ত যোগ করেছে, যার ফলে মোট শর্তের সংখ্যা ৫০-এ পৌঁছেছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল ২০২৬ অর্থবছরের বাজেটের সংসদীয় অনুমোদন, যা আইএমএফের স্টাফ চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এই বাজেট ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে অনুমোদিত হওয়া প্রয়োজন। ফেডারেল বাজেটের মোট আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭.৬ ট্রিলিয়ন , যার মধ্যে উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য ১.০৭ ট্রিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে।আইএমএফ-র নতুন শর্তগুলো প্রাদেশিক পর্যায়েও প্রযোজ্য। পাকিস্তানের চারটি প্রদেশকেই নতুন কৃষি আয়কর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এরমধ্যে রয়েছে কর রিটার্ন প্রক্রিয়াকরণ, করদাতার পরিচয় ও নিবন্ধন, জনসচেতনতা প্রচার এবং সম্মতি উন্নত করার কৌশল। এই ব্যবস্থা ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। এছাড়াও, সরকারকে আইএমএফের গভর্নেন্স ডায়াগনস্টিক অ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতে একটি শাসন-সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে, যা শাসনের প্রধান দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত ও সমাধান করবে।
আর্থিক খাতে, আইএমএফ পাকিস্তানকে ২০২৭-এর পরের আর্থিক পরিবেশের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর রূপরেখা তৈরি এবং প্রকাশ করতে বলেছে। এদিকে, শক্তি খাতে চারটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে খরচ পুনরুদ্ধারমূলক মূল্য বজায় রাখতে ১ জুলাইয়ের মধ্যে বার্ষিক বিদ্যুৎ ট্যারিফ রিবেসিং নোটিফিকেশন জারি করা।আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, পাকিস্তানকে ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশেষ প্রযুক্তি অঞ্চল এবং অন্যান্য শিল্প এলাকার সঙ্গে সম্পর্কিত সকল প্রণোদনা বাতিল করার পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, যা এই বছরের শেষ নাগাদ জমা দিতে হবে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, সরকারকে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সংসদে আইন পেশ করতে হবে যাতে ব্যবহৃত মোটর গাড়ি আমদানির উপর সকল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে এটি পাঁচ বছরের কম বয়সী গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে, তিন বছরের কম বয়সী গাড়ি আমদানির অনুমতি রয়েছে।