ছোটো থেকেই পিঠটাই তাঁর বেঁকেছিল। ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো। আর তাই আকাশ চলে যাচ্ছিল পায়ের তলায়, আর এই মাটি চলে যাচ্ছিল মাথার উপরে। কিন্তু তাতে তো তাঁর দোষ নেই। ঈশ্বরের সৃষ্টিই এমন অদ্ভূত ছিল। আগামী জন্মদিনের আগেই মায়ের কাছে উপহার চেয়েছিল শ্রীজা (নাম পরিবর্তিত)। এই পৃথিবীকে ও তার সৃষ্টিকে সোজা দেখতে চায়। উপহার বলতে এইটুকুই। মা–ও ১১ বছরের মেয়ের জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটেছিলেন। আর এই অক্লান্ত পরিশ্রমের জ𒁏েরে কোভিড আবহে জটিল অস্ত্রোপচার করে নাবালিকার ‘সোজা পৃথিবী’ দেখার ইচ্ছেপূরণ করল ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, স্কোলিওসিস অত্যন্ত জটিল অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকের কথায়, ঝুঁকি রয়েছে বিস্তর। অস্ত্রোপচারে মেরুদণ্ডে একাধিক স্ক্রু লাগাতে হয়। তখন খেয়াল রাখতে হয় যেন পিঠের স্নায়ুগুলি কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাহলে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন রোগী। ট্রামে, বাসে হামেশাই কুঁজো মানুষ দেখা যায়। সমীক্ষা বলছে,🦄 প্রতি ৪০ জন মহিলার মধ্যে একজনের মেরুদণ্ড অল্প হলেও বাঁকা থাকে। চিকিৎসকের কথায়, লোকজন ভয়েই অস্ত্রোপচার করতে চান না। মেরুদণ্ড সামান্য বাঁকা থাকলে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু যখন তা ধনুকের মতো বেঁকে যায় তখনই সমস্যার শুরু। যেমন হয়েছিল শ্রীজার। গোটা পৃথিবীকেই তিনি বাঁকা দেখছিলেন।
এই মেরুদণ্ডের শল্যচিকিৎসক ডা. অনিন্দ্য বসু জানান, শিরদাঁড়া যখন অত্যধিক বেঁকে যায় 💝তখন ফুসফুস স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফুসফুসের কাজ ব্যাহত হলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। আগামী ১ মার্চ জন্মদিন শ্রীজার। অনেকেই শ্রীজার মা'কে পরামর্শ দেন এই রাজ্যে ওই অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি প্রচুর। এমনকী ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারেন। বেঙ্গালুরুতে চলে যান। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে মল্লিকবাজারের এই হাসপাতালেই আসেন তিনি। অবশেষে গত ৪ নভেম্বর সাড়ে তিন ঘণ্টার জটি🦄ল অস্ত্রোপচার স্কোলিওসিস কারেকশন সার্জারি হল তাঁর।
কেমন এই অস্ত্রোপচার? মেরুদণ্ডের শল্যচিকিৎসক ডা. অনিন্দ্য বসু জানান, এই অপারেশনের দুটি ভাগ। প্রথম ভাগে মেরুদণ্ডে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে স্ক্রু এঁটে দেওয়া হ🌊য়। এরপর রড লাগিয়ে সোজা করা হয় মেরুদণ্ড। আপাতত একদম সোজা শ্রীজা। স্কোলিওসিসের শিকড় রয়েছে জিনের ভেতর। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সাধারণত পুরুষদের থেকে মহিলাদের মধ্যেই স্কোলিওসিস দেখা যায় বেশি।